এই সময়, মেদিনীপুর: আজ, সোমবার শালবনিতে জিন্দাল গোষ্ঠীর পাওয়ার প্লান্টের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত থাকবেন জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল, পার্থ জিন্দালরা। উদ্বোধন পর্ব সেরে এ দিন রাতে মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে থাকার কথা তাঁর।
আগামিকাল, মঙ্গলবার মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে তাঁর প্রশাসনিক সভা হওয়ার কথা। যেখান থেকে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি বিভিন্ন উপভোক্তাদের সরকারি সাহায্যও তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শিলান্যাস অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে মেদিনীপুর ঢোকার মুখে কলাইচণ্ডী খালের কাছে বুদ্ধদেবের কনভয় মাওবাদীদের পোঁতা মাইন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অশান্ত ছিল জঙ্গলমহল।
পরে জিন্দাল গোষ্ঠী বাজার ‘মন্দা’ বলে পিছিয়ে যায় এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা গড়া থেকে। অবশেষে ২০১৮ সালে শালবনিতে একটি সিমেন্ট কারখানা করে জিন্দাল গোষ্ঠী। শালবনিতে রং কারখানা তৈরি করার কথা ঘোষণা করে সিমেন্ট কারখানা উদ্বোধনের দিন। সেই কারখানা আজও হয়নি। ইস্পাত কারখানার জন্য প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমি দেওয়া হয়েছিল জিন্দালদের। গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে জিন্দাল গোষ্ঠী ওই জমিতে ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি পাওয়ার প্লান্ট তৈরির কথা ঘোষণা করে। আজ সেই প্লান্টের শিলান্যাস। জিন্দালদের বক্তব্য অনুযায়ী, দু’হাজার একর জমির উপর গড়ে উঠবে এই প্লান্ট। ১৬ হাজার কোটি টাকার এই প্লান্ট গড়ে তুলতে সময় লাগবে প্রায় তিন বছর।
এ দিকে, আগামিকাল, মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা ঘিরে প্রস্তুতিও চলছে সমান তালে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ব্রিগেডে বামেদের সভার ভিড়কে টেক্কা দিতে শেষ মুহূর্তে মেদিনীপুরকেই বেছে নিল দল। সেই লক্ষ্যেই ব্লকে ব্লকে চলছে প্রস্তুতি সভা। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। তাই প্রশাসনিক সভাকেই ‘জনসমুদ্রে ভাসিয়ে’ দিতে মরিয়া তৃণমূল। কিন্তু এই সভায় ভিড় কতটা হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলেই সংশয় রয়েছে।
কারণ, একদিকে তীব্র গরম, অন্য দিকে, বোরো ধান কাটার মরশুম এটা। তৃণমূলের ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি আরও একটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সদ্য চাকরিহারা প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় রয়েছেন ১৭০০ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। কালকের জমায়েতে সেটিও নেতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট বলেন, ‘যত গরম হোক বা বৃষ্টিপাত, মানুষ ভিজে ভিজেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় হাজির হন। বক্তব্য শোনেন। ফলে এমন জমায়েত হবে যে, অন্য কোনও রাজনৈতিক দল ব্রিগেডেও তত জমায়েত করতে পারবে না। তা প্রমাণ করে দেখিয়ে দেবো।’ দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান বলেন, ‘দাঁতন-মোহনপুর থেকে প্রচুর মানুষ সভায় যাবেন। সবাই মুখিয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখতে। তাঁর কথা শুনতে।’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভার জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উপভোক্তাদের নিয়ে আসার জন্য ৬৫৬টি বাস নিয়েছে। তার বাইরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দু’হাজার গাড়ি নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বড় ট্রাক, ছোট ট্রাক, টেম্পো প্রভৃতি। এছাড়াও বহু নেতা-কর্মী নিজেদের চারচাকা গাড়িতে এবং অনেকে চারচাকা ভাড়া করেও আসবেন বলে দাবি। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হবে। জনসমুদ্র হবে মেদিনীপুর শহর।’
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য মঙ্গলবার রাস্তায় কম বাস থাকবে। ফলে কিছুটা ভোগান্তি হবে নিত্যযাত্রীদের। জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভার জন্য যেহেতু ৬৫৬টি বাস নেওয়া হচ্ছে, ফলে ওইদিন দুপুর থেকে রাস্তায় বাস কিছুটা কম চলবে।’