• ২৬-এর ভোটে বঙ্গে জোটের রাস্তা খোলাই রাখছে সিপিএম
    এই সময় | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: বামেদের হারানো জনভিত্তি ফেরানোর জন্য ‘ব্যাক টু বেসিক’ ফর্মুলায় ফেরার পাশাপাশি ২০২৬ সালের দিকে তাকিয়ে বাংলা জোটের দরজা খোলা রাখার বার্তা দিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্টের ক্ষমতায় আসার নেপথ্যে ভূমিহীন কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিক, উদ্বাস্তু জনতার বড় ভূমিকা ছিল।

    ২০১১ সালের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার নেপথ্যে বামেদের পাশ থেকে এই জনতার সরে যাওয়া একটা বড় কারণ ছিল। বামপন্থীদের এই ট্রাডিশনাল জনসমর্থন ফেরানো যে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মূল লক্ষ্য, তা রবিবাসরীয় ব্রিগেডে সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু, খেতমজুর সংগঠনের সম্পাদক নিরাপদ সর্দার, কৃষকসভার নেতা অমল হালদারের ভাষণের স্পষ্ট হয়ে গেল।

    এই হারানো জনসমর্থন ফেরাতেই সিটু, কৃষকসভা, খেতমজুর সংগঠন–সহ চারটি গণসংগঠনের ব্যানারে রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ করে বামেরা। যেখানে শহুরে ছাত্র–যুবদের তুলনায় গ্রামীণ কৃষক, খেতমজুর, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা জমায়েতের সামনে ছিলেন। বামেদের এই ট্রাডিশনাল জনভিত্তি ফেরাতে একশো দিনের কাজে মজুরি বৃদ্ধির দাবি, জমির পাট্টা প্রাপকদের পাট্টা বেদখল হওয়ার অভিযোগ, আলু, ধান চাষি–সহ কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্যের দাবি, বস্তিবাসীদের অধিকার নিয়ে সরব হয়েছেন অনাদি, নিরাপদ, অমল, বন্যা টুডুরা।

    নিচুতলায় বুথ স্তরে সংগঠনকে জোরদার করার কথা বলেছেন এই বাম নেতারা। হারানো এই জনসমর্থন যে রাতারাতি ফিরবে না, তা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অজানা নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে শূন্য হয়েছে বামেরা। সেই শূন্যের গেরো কাটানো এখন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই নির্বাচনী কৌশল হিসেবে জোটের দরজা খোলা রাখার বার্তা দিয়েছেন মহম্মদ সেলিম।

    সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘যারা বিজেপির টাকা খাবে না, যারা তৃণমূলের ভয় পাবে না, তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা ২০২৬ সালের লড়াই লড়ব।’ এরপরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘বন্যা বলেছেন, উইকেট ফেলে দেবো ছাব্বিশে। কী উইকেট ফেলবেন তো? আমি ফুটবল ভালোবাসি। ফুটবলে একটু নেমে খেলতে হয়, আমাদের সবাইকে একটু নেমে খেলতে হবে।’ বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

    ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বাম–কংগ্রেস জোট হলেও শুভঙ্কর সরকার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পরে বিধানভবন ‘একলা চলো’ রাস্তা নিয়েছে। যদিও অধীর চৌধুরী–সহ কংগ্রেসের একাংশ বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষপাতী। বাম ব্রিগেডে নিয়ে এ দিন অধীর বলেছেন, ‘আমি চাই, বামেদের ব্রিগেড সফল হোক। কারণ, বামেরা ধর্মনিরপেক্ষ। কখনও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেনি।’

    ২০২১–এ বাম–কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফের জোট হলেও ২০২৪ সালে আইএসএফ একক লড়াই করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যে দুই ফুলের বিরোধী সমস্ত শক্তিকে একজোট করে ২০২৬–এ লড়াই করতে চায়, সেই বার্তা আগাম দিলেন সেলিম।

    যদিও তৃণমূল অথবা বিজেপি নেতৃত্ব বামেদের এই জোটের রাজনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বামেদের রাজ্যের মানুষ আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে এখন সারা দেশেই বামেরা প্রত্যাখ্যাত বলে মনে করছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মতো তৃণমূল নেত্রীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মনে করছেন, এখন বামেদের রাজ্যে কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। তাই সিপিএম নেতাদের কথার কোনও গুরুত্ব নেই।

  • Link to this news (এই সময়)