লম্বা উড়ানের পরে বিমানবন্দরে লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্তিকর দীর্ঘ অপেক্ষার যন্ত্রণা নেই। বিদেশ থেকে নেমেই ইমিগ্রেশনের স্মার্ট গেট পেরিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যাওয়া যাবে।
এমনটা ভেবেই দেশের প্রথম সারির বিমানবন্দরে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক ইমিগ্রেশন স্মার্ট গেট’ বসানো হয়েছিল। তালিকায় ছিল কলকাতাও। যদিও কলকাতা বিমানবন্দরে প্রতিদিন মেরেকেটে ২০ জন যাত্রীও ওই সুবিধে ব্যবহার করছেন না। আর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সেই চিরাচরিত অভিযোগ, যাত্রী কোথায়?
বিমানবন্দরের হিসেব বলছে, গড়ে প্রতিদিন দু’হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক যাত্রী কলকাতা দিয়ে যাতায়াত করেন। তার মধ্যে এমিরেটসেরই যাত্রী সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। অথচ সারাদিনে মাত্র জনা ২০ যাত্রী স্মার্ট গেট ব্যবহার করছেন! প্রশ্ন শুনে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে অফিসার বলছেন, ‘কেবলমাত্র যাঁরা নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন, তাঁরাই এই স্মার্ট গেটের সুবিধে নেন। কলকাতা থেকে নিয়মিত বিদেশ যাতায়াত করার লোক বা ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার কোথায়? তাই পড়েই থাকছে।’
পরিসংখ্যান বলছে, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে একদল যুবক কলকাতা থেকে নিয়মিত ব্যাঙ্কক–দুবাই যাতায়াত করেন। তাঁরা ব্যবসায়ীদের মালপত্র বয়ে নিয়ে যান। একই ভাবে চাহিদা মতো মালপত্র নিয়ে আসেন। তাঁরা ‘কেরিয়ার’ হিসেবে পরিচিত।
তাঁরা তো নিয়মিত যাত্রী, তাঁরা কেন এই স্মার্ট গেট ব্যবহার করছেন না? উত্তর এসেছে — ‘স্মার্ট গেট ব্যবহার করতে গেলে অনেক ভেরিফিকেশন লাগছে। কেরিয়ারদের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তাঁরা এই সব ঝক্কি–ঝামেলার মধ্যে পড়তে চান না। যাতায়াতের সময়ে এমনিতেই তাঁদের কাস্টমস এলাকায় অনেকক্ষণ জেরা–তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। ফলে, ইমিগ্রেশন তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার বাসনা তাঁদের সে ভাবে থাকে না।’
যে কোনও যাত্রীই কি বিদেশ থেকে কলকাতায় নেমে ওই স্মার্ট গেটের সুবিধে পেতে পারেন?
অফিসারেরা বলছেন, না। কারণ, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ঠিক করেছে, এই সুবিধে পেতে গেলে আগে যাত্রীকে আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে (ftittp.mha.gov.in) রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। সেখানে পাসপোর্ট, ছবি, অ্যাড্রেস প্রুফ–সহ কিছু নথি আপলোড করতে হবে। সেটা ঘরে বসেও করা যাবে। তার ভেরিফিকেশন হবে। ওই যাত্রীর আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরে যাত্রীকে হয় বিমানবন্দর, নতুবা কাছের এফআরআরও (ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস)–তে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিতে হবে।
সেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শেষ হলে তবেই যাত্রীর রেজিস্ট্রেশন হবে এবং তিনি ইমিগ্রেশন স্মার্ট গেটের সুবিধে পাবেন। এই রেজিস্ট্রেশন পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকবে। তার আগে পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে অবশ্য রেজিস্ট্রেশনও বাতিল হয়ে যাবে। আবার নতুন করে করতে হবে। অফিসারদের কথায়, ‘রেজিস্ট্রেশনের এই পুরো প্রসেস শেষ হতে এখন প্রায় ১০ দিনও লেগে যাচ্ছে। ফলে, রেজিস্ট্রেশন নেই, এমন ব্যক্তি বিমানবন্দরে এসেই এই সুবিধে পাবেন না। একবার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে তারপরে যতবার তিনি যাতায়াত করবেন, ততবারই স্মার্ট গেটের সুবিধে পাবেন।’
অন্য যাত্রীরা যখন বিদেশ যাতায়াতের পথে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইনে অপেক্ষা করবেন, তখন রেজিস্ট্রেশন করা সেই যাত্রী সোজা স্মার্ট গেটে গিয়ে বোর্ডিং কার্ড আর পাসপোর্ট স্ক্যান করলে গেট খুলে যাবে। ঠিক যেমন মেট্রো স্টেশনের স্মার্ট গেট স্মার্ট কার্ডের এক ছোঁয়ায় খুলে যায়। তবে, ইমিগ্রেশনে দ্বিতীয় ধাপ রয়েছে। স্মার্ট গেট দিয়ে ঢুকে একবার ছবি তোলাতে হবে এবং বায়োমেট্রিক ম্যাচ করাতে হবে। সেগুলোও হবে যন্ত্রের মাধ্যমে। সেটা মিলে গেলে দ্বিতীয় ও ফাইনাল গেট খুলবে।’
গত জানুয়ারিতে ঘটা করে এই সিস্টেম উদ্বোধনের পরে মার্চ থেকে কলকাতা ছাড়াও এই স্মার্ট গেট চালু হয়েছে চেন্নাই, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, কোচিন ও আমদাবাদে। কলকাতার অ্যারাইভাল ও ডিপারচার মিলিয়ে মোট আটটি এমন গেট রয়েছে। অভিযোগ, দেশের অন্য বিমানবন্দরে বহু যাত্রী রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ওই স্মার্ট গেট ব্যবহার করলেও কলকাতা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে।