• ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাসই বন্ধ, ধুঁকছে উত্তর ২৪ পরগ‍না
    এই সময় | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: কলকাতার ট্রামের পরিণতিই কি পেতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার বেসরকারি বাস? রীতিমতো স্বাস্থ্যবান অবস্থা থেকে হঠাৎ ক্ষয়রোগে আক্রান্ত এবং সেখান থেকে ক্রমশ অবস্থার অবনতি হতে হতে একেবারে মৃত্যুমুখে। সম্প্রতি জেলার রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (আরটিএ) একটি মিটিংয়ে খোদ রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকরাই যে তথ্য পেশ করেছেন, তাতেই স্পষ্ট হচ্ছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য। দেখা গিয়েছে জেলার মোট ৬৪টি বাস রুটে ১,২৯৬টি বেসরকারি বাস চলার পারমিট ইস্যু করা হয়েছিল। সেই ৬৪টি রুটের মধ্যে ২৩টি রুট পুরোপুরি বন্ধ। যাত্রী পরিবহণের কাজ করছে মাত্র ৬৭১টি বাস। অর্থাৎ পারমিট ইস্যু করা বাসের মাত্র ৫১ শতাংশ বর্তমানে চালু আছে। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক বাসই বন্ধ।

    অটো রিকশা, ই–রিকশা এবং টোটোর মতো স্থানীয় স্তরের পরিবহণের সংখ্যা গত কয়েক বছরে বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। এর পাশাপাশি জেলার বহু বাসের বয়সই ১৫ পার করেছে। তাদের বদলি হিসেবে অন্য বাস কিনে ব্যবসা চালু রাখার সাহস দেখাতে পারেননি বাসের মালিক। বেশ কিছু রুটে বাস চালিয়েও লক্ষ্মীলাভ করে উঠতে পারছেন না মালিকরা। তাই বাড়ি থেকে গাঁটগচ্চা দেওয়ার বদলে বাস বিক্রি করে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেছেন তাঁরা। একসঙ্গে এত রকমের সমস্যা অনেকটা চক্রব্যুহে আটকা পড়ে যাওয়া অভিমন্যুর মতোই চেপে ধরেছে উত্তর ২৪ পরগনার বেসরকারি বাসের ব্যবসাকে।

    আর তারই প্রভাবে গত কয়েক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে জেলার প্রায় ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাসই। এখানেই শেষ নয়, রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (আরটিএ) অনুমোদন দেওয়া ৬৪টি বাস রুটের মধ্যে আপাতত বন্ধ ২৩টি রুট। অর্থাৎ জেলার অনুমোদিত বাসরুটের ৩৫ শতাংশই আপাতত বন্ধ। এই রুটে নতুন করে পারমিট দেওয়াও হচ্ছে না। জেলার বেসরকারি বাস পরিবহণের অবস্থা কেমন সে বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার আরটিএ–র মার্চের মিটিংয়ে সামনে আসা এই তথ্য শুধু বেসরকারি বাস–ব্যবসার বেহাল অবস্থাই নয়, একই সঙ্গে জেলার যাত্রীদের অবস্থাও যে কতটা কঠিন — সেটাও স্পষ্ট করে।

    তা হলে কি উত্তর শহরতলির বেসরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মুখে? আশঙ্কা উড়িয়ে না–দিয়ে বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন অল বেঙ্গল বাস–মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্য সরকার যে নীতিতে চলছে, সেটা বেসরকারি বাসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনুকূল নয়। একদিকে ভাড়া বাড়ে না, কিন্তু জ্বালানির দাম বেড়ে চলে। আবার অন্য দিকে অটো এবং টোটোর মতো যে পরিবহণ–ব্যবস্থা বাস থেকে নামার পরে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল, এখন তারাই বাসের প্রতিযোগী। তাই ঘরে–বাইরে এত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে এঁটে ওঠা কঠিন।’

    রাজের বাস পরিষেবা নিয়ে কর্মরত সংগঠন কলকাতা বাস–ও–পিডিয়ার পক্ষ থেকে অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, বেসরকারি বাসের টিকে থাকার লড়াই ততই কঠিন হচ্ছে। মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষ কিন্তু কথায় কথায় অ্যাপ ক্যাব বুক করতে পারেন না। তাঁদের ভরসা বাস–মিনিবাস। এমন ভাবে বাসের সংখ্যা এবং রুট কমতে থাকলে সাধারণ মানুষের বিপদের শেষ থাকবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)