বাবার কেনা চার চাকা গাড়ি শো–রুম থেকে আনার পরে সেটি নিয়ে বেরিয়েছিলেন মানিকতলার বাসিন্দা বছর সতেরোর এক কিশোরী। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইএম বাইপাসে এক পথচারীকে ধাক্কা মারে গাড়িটি। ঘটনায় গুরুতর জখম হন এক প্রৌঢ়া। তদন্তে উঠে আসে, সদ্য কেনা গাড়িটি নিয়ে যে কিশোরী বেরিয়েছিল, তার ড্রাইভিংয়ের কোনও প্রশিক্ষণই ছিল না।
নতুন গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়া চালকের সংখ্যা কম নয় এ রাজ্যে। পরিবহণ দপ্তর সূত্রের খবর, ২০২৪–এর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে তার ৪৫ শতাংশই ঘটেছে এমন গাড়িতে যেগুলির বয়স ১–৫ বছরের মধ্যে। ২০২৩–এ এটাই ছিল ৩৮ শতাংশ। ৩০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫–১০ বছর বয়সি গাড়ির। আর ১০–১৫ বছরের মধ্যে বয়স এমন গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ১৫ শতাংশ।
রাজ্যে পথ দুর্ঘটনার বিষয়ে বিশদে জানতে পরিবহণ দপ্তরের অফিসার, পুলিশ এবং আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপকদের দিয়ে সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য। সেখানেই এই তথ্য উঠে এসেছে। পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফ কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্ঘটনার সংখ্যা রাজ্যে অনেকটাই কমেছে। আগামী দিনে সেটা আরও কমিয়ে আনা আমাদের টার্গেট। সে জন্যই বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য আমরা নিচ্ছি। তাঁদের পরামর্শ মতোই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’
কেন নতুন গাড়িতে বাড়ছে দুর্ঘটনার হার? পরিবহণ দপ্তরের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাড়ি নতুন থাকার সময়ে চালকের মাথায় কাজ করে একটি বিষয় — গাড়ি নতুন বলে পুরো ফিট। তাই রাস্তায় কোনও সমস্যা হবে না। ফলে তাঁরা অনেক কিছুই খেয়াল রাখেন না। তুলনায় পুরোনো গাড়ির ড্রাইভাররা অনেক বেশি সতর্ক থাকেন চালানোর সময়ে। তবে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দপ্তরের অফিসারেরা।
তবে পরিসংখ্যান সামনে আসার পরেই নতুন গাড়িতে দুর্ঘটনায় রাশ টানতে চাইছে রাজ্য। পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, পথ দুর্ঘটনা ঠেকাতে স্পিড ম্যানেজমেন্ট পলিসি আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ির গতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন গাড়ির চালকদের সতর্ক করতে সব জেলার পরিবহণ অফিসারদের বলা হয়েছে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস বল্ডিংয়ে প্রচার চালাতে। গাড়ি চালানোর সময়ে সিট বেল্ট পরা, সিগন্যাল বা স্পিড লিমিট মানার বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া হবে।