• দক্ষিণ শহরতলির ২ নয়া রেল প্রকল্প গড়তে চার মাসে বিবেচনার নির্দেশ
    এই সময় | ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • অমিত চক্রবর্তী

    রাজ্যে রেলের অন্তত ৬১টি প্রকল্প আটকে রয়েছে শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণের অভাবে। কোথায় কোন প্রকল্প শুরুই করা যায়নি, কোথায় কোন প্রকল্প মাঝপথে আটকে রয়েছে এবং কোথায় কোন প্রকল্প শেষের মুখে এসেও থমকে গিয়েছে, তার বিস্তারিত তালিকা দিয়ে রেলমন্ত্রী চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই সব জমির ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর দেওয়া সেই চিঠি হাইকোর্টে এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশ্যে এসেছে। সেই মামলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের আগে গুরুদাসনগর থেকে বাখরাহাট ও বাখরাহাট থেকে চকগোপাল হয়ে বজবজের কাছে চাঙ্গি পর্যন্ত রেল প্রকল্প গড়ার পদক্ষেপ করতে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।

    সেই মামলাতেই রেলমন্ত্রীর ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, প্রকৃত অর্থেই জনস্বার্থে রেল প্রকল্প তৈরির জন্য রেল ও রাজ্যকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। কিন্তু এমন প্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে আদালত সরাসরি কঠোর কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। তবে হাইকোর্ট মনে করে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে দু’টি রেল পথের কথা বলা হয়েছে, তা বিবেচনা করে আগামী চার মাসের মধ্যে সেই ব্যাপারে আবেদনকারীর তরফে বিস্তারিত জানাতে হবে রেলকে।

    হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, ডায়মন্ড হারবারের আগে গুরুদাস নগর থেকে বাখরাহাট পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রেলপথ ও বাখরাহাট থেকে বজবজের চাঙ্গি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রেল পথের জন্য জরুরি ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণ করে রেল চালুর জন্য রেল ও রাজ্যকে নির্দেশ দিক হাইকোর্ট। কারণ, বেহালা থেকে কিছুটা এগোলে রাইপুর, বাখরাহাট হয়ে সাতগাছিয়া হয়ে বজবজ থেকে আমতলার বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লক্ষ নাগরিককে সড়ক পথের উপরে ভরসা করতে হয়। জেলার এই বিরাট এলাকা আজও রেল যোগাযোগের বাইরে রয়েছে।

    হাইকোর্টে দায়ের হওয়া ওই মামলায় একটি চিঠির উল্লেখও করা হয়েছে। যেখানে রেল প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সহযোগিতা চেয়ে রেলমন্ত্রী কার্যত শরণাপন্ন হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর। চিঠিতে রেলমন্ত্রীর বক্তব্য, গোটা দেশের সঙ্গেই এই রাজ্যেও রেল লাইনের সম্প্রসারণ করতে চায় কেন্দ্র। কিন্তু বহু প্রকল্প হয় শুরু করা যায়নি, অথবা মাঝপথে থমকে রয়েছে, জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায়। রেলমন্ত্রী এ রাজ্যের এমন ৬১টি রেল প্রকল্পের তালিকাও ওই চিঠির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তার কোনটি কী অবস্থায় ঝুলে রয়েছে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রাজ্যকে। কেন্দ্রের দাবি, ২০২৩–’২৪ অর্থবর্ষে ১১,৯৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল এই রাজ্যের রেল প্রকল্পগুলির জন্য। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে দাবি রেলমন্ত্রীর। তাই প্রকল্পগুলির দ্রুত রূপায়ণে রাজ্যকে জমি অধিগ্রহণ করে সহযোগিতার আবেদন করা হয়।

    রেল যাত্রীদের তরফে দাবি, শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই ক্যানিং থেকে মাতলা নদী পেরিয়ে ঝড়খালি, নামখানা থেকে বকখালি, মথুরাপুর থেকে রায়দিঘি হয়ে সুন্দরবনের বেশ কিছু ব্লকের জন্য রেল প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছিল বহু বছর আগে। কিন্তু এতদিনেও কোনওটাতেই একচুলও কাজ এগোয়নি বলে দাবি। মাতলার উপর দিয়ে রেল ব্রিজ তৈরির জন্য প্রায় এক দশক আগেই নদীতে পিলার পোঁতা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই! তার পর আর কোনও অগ্রগতি হয়নি।

    কলকাতা হাইকোর্টের এই মামলায় রাজ্যের তরফে নথি দেখিয়ে দাবি করা হয়, গুরুদাসনগর ও বাখরাহাটের দু’টি রেল প্রকল্পের ব্যাপারে পূর্ব রেলের তরফে ২০১৬ সালে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জমি অধিগ্রহণ)–এর কাছে নতুন রেলপথের জন্য ল্যান্ড প্ল্যান এবং অ্যালাইনমেন্ট প্ল্যান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর তা নিয়ে এগোয়নি রেল। ফলে কোথায় কী ভাবে কোন প্রকল্পের জন্য কতটা জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তার সবটাই অন্ধকারে। আদালত এই নথি দেখার পরেই রেলকে চারমাসের মধ্যে বিষয়টি বিবেচনার নির্দেশ দেয়।

  • Link to this news (এই সময়)