‘কোথা থেকে এসেছেন জানি না, শুধু চাই…’, দিঘায় ভেসে আসা জগন্নাথ মূর্তি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা, কী বলছেন গৃহস্থ?
প্রতিদিন | ২১ এপ্রিল ২০২৫
রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: দিঘায় ভেসে আসা জগন্নাথদেবের মূর্তি নিয়ে এখন জোর শোরগোল। ভোগীব্রহ্মপুর গ্রামের বাসিন্দা অবনী সামন্ত তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান মূর্তিটি। এই ভোগীব্রহ্মপুরেই জগন্নাথ মন্দির (Jagannath Temple) নির্মাণ হচ্ছে। অবনী সামন্তর বাড়িতে জগন্নাথদেবকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানেই পুজোপাঠ শুরু হয় জগন্নাথদেবের। বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড় উপচে পড়েছে। অনেকের দাবি, নতুন জগন্নাথ মন্দিরের কোথাও মূর্তিটি ঠাঁই পাক। তবে অবনীবাবু বলছেন, “কোথা থেকে তিনি এসেছেন জানি না। জানতে চাই না। শুধু চাই ভগবান আপাতত আমার বাড়িতেই থাকুন।”
রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত পুরনো জগন্নাথ মন্দিরের কাছে একটি ঘাট তৈরি হচ্ছে। সেখানে গড়া হচ্ছে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি। রবিবার সেই কাজই করছিলেন মিস্ত্রিরা। সমুদ্রপাড়ের বোল্ডারও সরাচ্ছিলেন কয়েকজন। তাঁদেরই একজন মঙ্গল রানা। প্রথম দেখতে পান সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে আসছে একটি মূর্তি। ছুটে আসেন আশপাশের আরও অনেকে। সবাই মিলে তোলা হয় মূর্তিটি। আসেন সমুদ্র সৈকতের দোকানদাররাও। বিস্ময় যেন এরপরই শুরু। মূর্তিটি সাক্ষাৎ ভগবান জগন্নাথের। কাঠের মূর্তি। যার একটি হাত ভাঙা। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। পর্যটকদের ভিড় জমতে থাকে। ভক্তিভরে কেউ প্রণাম করছেন, কেউ বা কৌতূহলে ছবি তুলছেন। ততক্ষণে ঘটনা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। স্থানীয়রা ফুল নিয়ে ছুটে আসছেন। কারও হাতে মালা। কেউ বা একটি বার ‘ভগবান’কে ছুঁতে চান।
একদিকে যখন পুজো চলছে, অন্যদিকে তখন ফিসফাস। কেউ কেউ বলছেন, এসব নেহাতই ছেলেখেলা। কারও দাবি, এ মূর্তি অন্য কোথাও থেকে ভেসে এসেছে। কোনও আধ্যাত্মিক যোগ নেই। তাঁদের যুক্তি, এই মূর্তির গায়ে না আছে শ্যাওলা, না আছে সমুদ্রের কোনও ছাপ। এটা নিছকই একটা জলে ভেসে আসা কাঠের মূর্তি। দিঘা (Digha) এলাকার বাসিন্দা তথা সমুদ্রপাড়ে কর্মরত নুলিয়া রতন দাস বলেন, “আমি দীর্ঘদিন দিঘা সৈকতপাড়ে নুলিয়ার কাজ করছি। এর আগেও দুই-একবার জগন্নাথদেবের মূর্তি ভেসে এসেছে। কারণ, ওড়িশার মানুষেরা পুরনো জগন্নাথদেবের মূর্তিকে সমুদ্রে বিসর্জন দিয়ে মন্দিরে নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। ফলে কাঠের মূর্তি সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে দিঘার পাড়ে এসে ওঠে। এটা নিয়ে জল্পনার কিছু নেই। আসলে দিঘায় যেহেতু জগন্নাথধামের উদ্বোধন হচ্ছে। তাই মানুষ এটা নিয়ে একটু বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে।”
যদিও বিরুদ্ধ মতও জোরালো। সব সমালোচনা উড়িয়ে স্থানীয় বহু মানুষ বলছেন, “আর অপেক্ষা নয়। ভগবান স্বয়ং চলে এসেছেন নিজগৃহে। আমরা সাদরে গ্রহণ করেছি। এটা তাঁরই আশীর্বাদ।” কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, রামমন্দির নিয়ে হুজুগ হয়, আর জগন্নাথ ভেসে এলেই দোষ! কেবল স্থানীয়ারাই নন, কাঠের তৈরি এই জগন্নাথদেবের মূর্তিটি কী করে ভেসে এল, তা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়। প্রসঙ্গত, ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘার জগন্নাথ মন্দির (Digha Jagannath Temple) উদ্বোধন। ২৯ এপ্রিল রয়েছে যজ্ঞ। এর ফলে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে সৈকতশহরে। তার আগে দিঘার সৈকতে জগন্নাথদেবের মূর্তি ভেসে আসায় উৎসাহী পর্যটকদের মধ্যে কৌতূহল চরম। বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল বাড়ার পরই যোগাযোগ করা হয় দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক অপূর্বকুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” যেভাবেই তিনি আসুন না কেন, রহস্য-আবেগ ঘিরে মন্দির উদ্বোধনের দশদিন আগেই দিঘা যেন পুরোপুরি জগন্নাথধাম।