পার্থ চৌধুরী: ধানের আবার মা বাবা। অবাক হলেন নিশ্চয়ই! হ্যাঁ এই বিশেষ ধরনের ধান চাষই হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানে। গোটা মাঠ ছেয়ে গেছে এই ধানে। এ ধানের পোশাকি নাম মা বাবা। আসলে দুধরনের ধানের মিলন ঘটিয়ে এই ধান তৈরি করা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে ধান চাষই হল মূল ভরকেন্দ্র। এই চাষকেই আরও লাভজনক ও বৈজ্ঞানিক করে তুলতে জেলার দক্ষিণ দামোদর এলাকার বড় গোপীনাথপুর গ্রামে নজরকাড়া উদ্যোগ নিলেন এক চাষি। প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে তিনি সফলভাবে চাষ করছেন এই ধান। এই ধানচাষে বিশেষ পদ্ধতিতে পুরুষ ও স্ত্রী ধানগাছের মধ্যে পরাগরেণুর সঙ্করায়ণের মাধ্যমে হাইব্রিড ফসল উৎপন্ন হয়। পুরুষ ধান থেকে স্ত্রী লাইনে দড়ি বা লাঠির মাধ্যমে নাড়াচাড়া করে ছড়ানো হয় পরাগরেণু।
কৃষকদের মতে, এই পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন উর্বর মাটি, পর্যাপ্ত সূর্যালোক, উন্নত সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের সঠিক নিয়ন্ত্রণ। কৃষি বিশেষজ্ঞ সুশান্ত চন্দ্র কর্মকার জানিয়েছেন, এই হাইব্রিড ধানচাষ F1 (ফাউন্ডেশন ফার্স্ট) এবং F2 (ফাউন্ডেশন সেকেন্ড) ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে বীজ উৎপাদিত হয়, আর দ্বিতীয় ধাপে সেই ফসল খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চাষী সন্দীপ মন্ডল জানান, "আমি বড় গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক। ৫০ বিঘা জমিতে মা বাবা (পুরুষ ও স্ত্রী) ধানের চাষ করেছি। প্রথমে পুরুষ ধান লাগানো হয়, তারপর মহিলা ধান। এরপর পুরুষ ধান কেটে দিই, মেশিন দিয়ে মহিলা ধান কাটা হয়। এইভাবে হাইব্রিড ধান তৈরী হয়। এতে বীজ উৎপাদন হয় এবং এই ধান ভবিষ্যতে ফুড হিসেবেও ব্যবহার হয়। আগেও করেছি, এবারও করছি। ভালো ফলনও পাচ্ছি। এই উদ্যোগ নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের ধানচাষে, যা ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার দিশা দেখাতে পারে।