• এখনও নেভেনি ডোমজুড়ের কারখানার আগুন, বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা, ঘটনাস্থলে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর
    প্রতিদিন | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: সোমবার দুপুরে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল হাওড়ার ডোমজুড়ের ওএনজিসির কারখানায়। কমে এলেও রাত পর্যন্ত সেই আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। দমকলকর্মীরা আগুন সম্পূর্ণ নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কারখানাটি রাসায়নিকে ঠাসা থাকায় সেই আগুন নেভানো কঠিন হচ্ছে। এমনই জানিয়েছেন দমকলের আধিকারিকরা। একসময় জলে কাজ না হওয়ায় ফোম দিয়ে আগুন নেভানো শুরু হয়। ফোম ব্যবহারের পরেই আগুন ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে বলে খবর। তবে এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর মেলেনি। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত? সেই বিষয়ে এখন কিছু বলা যাবে না বলেই জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

    ডোমজুড়ের দক্ষিণ ঝাঁপড়দহের কাছে প্রায় ১২ বিঘা জমির উপর ওই কারখানা। এদিন দুপুর আড়াইতে নাগাদ ওই কারখানায় আগুন লাগে। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। প্রাণ বাঁচাতে কারখানার শ্রমিক ও কর্মীরা দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসেন। প্রথমে দমকলের চারটি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে যায়। কিন্তু আগুনের তীব্রতা ক্রমে বাড়ে। কারখানার মধ্যে থেকে ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দ আসতে থাকে। মুহূর্তে লেলিহান শিখা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। শেষপর্যন্ত দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চালায়। আগুনের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণকুমার ত্রিপাঠি, অতিরিক্ত জেলাশাসক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আজার জিয়া-সহ হাওড়া সিটি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের সদস্যরাও হাজির হন।

    বিপুল পরিমাণে রাসায়নিক মজুত থাকায় দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে ওই কারখানা। আগুন ও ধোঁয়া ঘটনাস্থলের ২ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখতে পাওয়া যায়। ক্রমাগত বিস্ফোরণে আগুনের গোলা গিয়ে পড়ে পাশের হোগলা বন-সহ কয়েকটি কারখানায়। ফলে সেখানেও আগুন লাগে। বেশ কিছু সময়ের চেষ্টায় দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই কারখানার আশপাশে কোনও জনবসতি নেই। জনবসতি হলে পরিস্থিতি কোথায় যেত? সেই আশঙ্কা করেছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কারখানার আশপাআশের এলাকা ফাঁকা করে দেওয়া হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে রাখে ওই এলাকা। এলাকার বাসিন্দা মিন্টু শেখ বলেন, ‘‘দুপুরবেলা কারখানাটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে দেখে আমরা ওই কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছি। তারপর পুলিশ এলাকা ফাঁকা করে দেয়।’’

    দক্ষিণ ঝাঁপড়দহের পঞ্চায়েত প্রধান আশিস আহেরি বলেন, ‘‘এই কারখানার ট্যাক্স ঠিক মতো দেওয়া হয় না। কী থেকে আগুন লাগলে, তা আমরা জানি না। কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে ওদের কাছে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আমরা তো দেখতে পায়নি।’’ জগদবল্লভপুর বিধানসভার বিধায়ক সীতানাথ ঘোষ বললেন, ‘‘রাসায়নিক বিস্ফোরণের জেরে আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

    কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে নাসিম হুসেনের অভিযোগ, ‘‘আগুন লাগার পর দমকল প্রায় দেড় ঘন্টা দেরিতে ঢুকেছে। তাই আগুন এতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিল।’’ তিনি আরও জানান, কারখানার ভিতর রঙ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল, থিনারের মতো উচ্চ ক্ষমতার দাহ্য পদার্থ ছিল। হাওড়ার ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার রঞ্জনকুমার ঘোষ ওই অভিযোগ মানতে চাননি। বললেন, ‘‘আগুনের খবর পাওয়ার পরই দমকল পৌঁছে গিয়ে কাজ শুরু করে। ভয়াবহতা দেখে ১৫টা ইঞ্জিন আমরা নিয়ে আসি। ৫ ঘন্টার মধ্যেই আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে। কিছু জায়গায় আগুন জ্বলছে সেটিও নিভিয়ে ফেলা হবে।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)