• ওঁরাই খবর দিলেন, ওঁদেরই দমবন্ধ, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ২ পুরোহিত
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: তাঁরা দু’জনেই সকলকে সতর্ক করেছিলেন। খবর দিয়েছিলেন, আগুন লেগেছে। সেইমতো খবর যায় দমকলেও। বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের অঘটন থেকে কিছুটা হলেও রেহাই মেলে। কিন্তু তাঁরাই আর শেষ পর্যন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে বেরোতে পারলেন না। ছাদের দরজা খুলতে না–পেরে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন দুই পুরোহিত।

    পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের একটি ধর্মশালায় মৃত ওই দুই পুরোহিত হলেন কিষানলাল উপাধ্যায় (৫৮) ওরফে শাস্ত্রীজি এবং সুনীলকুমার শর্মা (৪৮)।

    শাস্ত্রীজি বেনারস থেকে এসেছিলেন বিশেষ পুজোর জন্য। আর পাথুরিয়াঘাটার বিখ্যাত বিহারীজি মন্দিরে নিত্য দিনের পুজো করতেন সুনীল। তাঁদের ঘরের উল্টো দিকে একটি কাপড়ের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত ঘরে আগুন লাগলে, সকলকে খবর দেওয়ার পরে তাঁরা ছাদে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ছাদের দরজায় তালা থাকায় তা ভেঙে বাঁচার মরিয়া চেষ্টাও করেছিলেন দু’জনে।

    কিন্তু শেষমেশ ভাঙতে পারেননি সেই তালা। ফলে দমবন্ধ হয়েই তাঁদের দু’জনের মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিক অনুমান দমকলের। দুই পুরোহিতের আদি বাড়ি রাজস্থানে। ঘটনার ব্যাপকতার দিক থেকে তুলনা না–হলেও এ ভাবে ছাদে তালাবন্ধ থাকায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডকে। সেখানেও প্রাণ বাঁচাতে অনেকে ছাদে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গ্রিলের গেটে তালা লাগানো থাকায় অনেকেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান ছাদে যাওয়ার সিঁড়িতে।

    পাথুরিয়াঘাটার মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে রবিবার গভীর রাতে। উত্তর কলকাতার ৬৫–এ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে ‘শ্রী বিহারীজি আর্কেড’–এর চারতলায় একটি কাপড়ের গুদামে আগুন লাগে। স্থানীয়রা এই চারতলা বাড়িটিকে ‘বাঙুর ধর্মশালা’ নামেই চেনেন। রাতে আগুন লাগায় কাপড়ের গুদামঘর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশপাশে। সে সময়ে চারতলায় যেখানে আগুন লেগেছিল, তার উল্টো দিকে একটি চিলেকোঠার ঘরে ছিলেন ওই দুই পুরোহিত।

    স্থানীয়রা জানান, ওই দুই পুরোহিতদের কেউ–ই কলকাতায় স্থায়ী ভাবে থাকতেন না। রবিবার বেনারস থেকে বিশেষ পুজোর জন্য আসেন কিষানলাল। আর তাঁকে সঙ্গ দিতে তাঁর সঙ্গেই ওই চিলেকোঠার ঘরে থাকতে আসেন সুনীল। এমনিতে তিনি শহরে থাকতেন মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডে।

    স্থানীয়দের একাংশ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলার ইলোরা সাহা জানান, ওই দু’জন পুরোহিতই অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সকলকে ফোন করে খবর দেন। তাঁদের উল্টোদিকের কাপড়ের গুদামঘরে আগুন লাগলেও, তাঁদের ঘর আগুনের গ্রাসে যায়নি। চারদিক কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ায় তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদের দরজা দিকে এগোন। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় ছাদে আর বেরোতে পারেননি। সিঁড়ি ধোঁয়ায় ঢেকে যায় বলে নীচেও নামতে পারেননি।

    সোমবার ভোরে তাঁদের দেহ উদ্ধার করে দমকল ও পুলিশ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে কিছু এলাকাবাসীর বক্তব্য, পুরোহিতদের ঘরে এসি ছিল। গুদামঘরে লাগা আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে, পুরোহিতদের রুমটি এসি–র মাধ্যমে ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। এবং তাতেই দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে তাঁদের।

    স্থানীয় বাসিন্দা নাথুপ্রসাদ শঙ্কর বলেন, কাপড়ের গুদামে আগুন লেগেছিল। তিন জন কর্মী ছিলেন। তবে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসে ওই কর্মীদের চারতলা থেকে নিরাপদে নামিয়ে আনে। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশও আসে ঘটনাস্থলে।

    স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বাড়িটির মালিকানা বর্তমানে এক অবাঙালি ব্যবসায়ীর নামে। তিনিই ছিলেন সুনীলকুমার শর্মার যজমান। বেনারস থেকে সুনীল বিশেষ পুজোর জন্য নিয়ে এসেছিলেন শাস্ত্রীজিকে। সোমবারই শাস্ত্রীজির প্রয়াগরাজে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

    সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ফিরহাদ বলেন, ‘এই বিল্ডিং নিয়ে এনকোয়ারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে আগুন লাগল, দমকল খতিয়ে দেখছে। পুরোহিতরা বাইরে থেকে এসেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কলকাতা পুরসভা, দমকল, পুলিশ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’

  • Link to this news (এই সময়)