• ছ’দিনে পড়ল সাফাই কর্মবিরতি, জঞ্জালময় শহর, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: পুরুলিয়া শহরে অবর্জনা সাফাই নিয়ে সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থা অব্যাহত। কয়েক মাস বেতন না পেয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন পুরুলিয়া শহরের সাফাই কর্মীরা। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া সাফাই কর্মীদের সেই কর্মবিরতি এ নিয়ে ছ’ দিনে পড়ল। শহরের আবর্জনা সাফাই বন্ধ। রাস্তার ধারে ধারে রাখা ভ্যাটগুলি জঞ্জালে ভর্তি। কোথাও কোথাও আবর্জনা উপচে রাস্তায় ছড়িয়েছে। বাজারগুলি সাফাই না হওয়ায় তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকী বাড়ির আবর্জনা ফেলার বালতিও উপচে পড়ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়ির আবর্জনা রাস্তার ধরে ফেলে দিয়ে আসছেন। যার জেরে দূষিত হচ্ছে শহরের পরিবেশ।

    সাফাই কর্মীদের ধর্মঘটের জেরে যে অচলাবস্থা চলছে, তার দায় চেয়ারম্যানের দিকে ঠেলছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের কাউন্সিলারদের একাংশও এই পরিস্থিতির জন্য চেয়ারম্যানকেই দায়ী করছেন। সমস্যার সমাধানে পুরুলিয়ার মহকুমা শাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখেছেন পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিভাসরঞ্জন দাস। চিঠিতে বিভাস জানিয়েছেন, সাফাই কর্মীদের ধর্মঘটের জেরে পুরসভার রাস্তাঘাট জঞ্জালের স্তূপে পরিণত হয়েছে। এর দায় কোনওভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না বলেও এসডিওকে নালিশ জানিয়েছেন বিভাস। সেইসঙ্গে তাঁর মত, পুরবোর্ড গঠন হওয়ার পর থেকেই পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের মাসের শেষে বেতন দিতে পারছে না পুরসভা। বেতন বকেয়া থেকে যাচ্ছে। যার জেরে কখনও সাফাই কর্মীরা, কখনও জলবিভাগের কর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছেন। কেন শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হবেন? আমি শ্রমিকদের পাশে রয়েছি। এনিয়ে পুরুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান নব্যেন্দু মাহালি বলেন, বিভাসবাবু তো তৃণমূলেরই কাউন্সিলার। উনি তো পুরসভার বিরোধী দলনেতা নন। এ নিয়ে এসডিওকে চিঠি না লিখে উনি আমাকেও তো জানাতে পারতেন। বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেত। আসলে পুরবোর্ডকে কালিমালিপ্ত করতেই উনি এইসব করছেন। চেয়ারম্যানের সংযোজন, সাফাই কর্মীদের মাত্র একমাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আমরা বেতন দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করেছি। আশা করছি শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি মাসে শুধুমাত্র সাফাই কর্মীদের বেতন দিতেই পুরসভার প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। অথচ, বিপুল এই খরচ সামলানোর মতো আর্থিক শক্তি নেই পুরসভার। চেয়ারম্যানের দাবি, পুরসভার আয় সীমিত। ঠিকমতো ট্যাক্স আদায় হচ্ছে না। সাফাই বিভাগে অকাজের কর্মীই বেশি। আমরা সাফাই কর্মীদের এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করাতে চাইছি। তাতে বেতনের সমস্যা আর থাকবে না। কিন্তু দুর্থাগ্য সাফাই কর্মীরা এই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না। 

    পুরসভার অচলাবস্থা নিয়ে বিজেপির জেলা সহ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, দৈনিক ১২০ টাকা হারে সাফাই কর্মীরা মাসে মাত্র ৩৬০০ টাকা বেতন পান। সেই টাকাও দিতে পারছে না পুরসভা। কিন্তু কাউন্সিলাররা অফিস খরচ দেখিয়ে প্রতিমাসে ঘুরপথে ২০ হাজার টাকা করে পুরসভা থেকে তুলছেন। সাধারণ মানুষের করের টাকা এভাবেই লুটেপুটে খাচ্ছে পুরসভার কাউন্সিলাররা। অথচ পুর পরিষেবা দেওয়ার বেলায় অষ্টরম্ভা! এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে চেয়ারম্যান সহ গোটা পুরবোর্ডের পদত্যাগ করা উচিত।
  • Link to this news (বর্তমান)