• জল সরবরাহ থেকে হাত গোটাচ্ছে সেইল-ইসিএল, দুশ্চিন্তায় বাসিন্দারা
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: স্যার বীরেন মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে সেজে উঠেছিল কুলটি। বার্নপুরের মতো কুলটিতেও ইস্কোর কারখানার ইউনিট গড়েছিলেন। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি সমগ্র এলাকার পানীয় জল, আলোর ব্যবস্থা করে এক আধুনিক টাউনশিপের রূপ দিয়েছিলেন ওই বাঙালি শিল্পপতি। এখন সেই কুলটিতেই জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে। বীরেনবাবুর কারখানার চাবিকাঠি এখন কেন্দ্রের হাতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা সেইল গ্রোথ ওয়ার্কস কর্তৃপক্ষ এলাকায় পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করতে অপারগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইচ্ছে করেই সেইল জল সরবরাহ থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। যার জেরে কুলটিজুড়ে চলছে জলসঙ্কট। কুলটির পাশাপাশি বার্নপুরে জল সরবরাহ নিয়েও বাড়ছে উদ্বেগ। বার্নপুরের ইস্কো কর্তৃপক্ষ আসানসোল পুরসভাকে এলাকায় জল সরবরাহ করার আর্জি জানিয়েছে। শুধু সেইল কর্তৃপক্ষ নয়, কোলিয়ারি এলাকাতেও পর্যাপ্ত জল দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে আসানসোল থেকে জামুড়িয়া সর্বত্র। আগে ইসিএল নিজের কোয়ার্টার ছাড়াও পাশ্ববর্তী এলাকায় জল সরবরাহ করত। অভিযোগ, এখন নিজেদের কোয়ার্টারেও সময়মতো জল সরবরাহ করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় উদ্বেগে ভুগছে আসানসোল খনি ও শিল্পাঞ্চল। 

    খনি এলাকা হওয়ায় জলস্তর বহু নীচে নেমে গিয়েছে। কুয়ো, পুকুর কেটেও জল পাওয়া যাচ্ছে না। আসানসোল উত্তর থানার গিরমিট কাখয়া এলাকায় ইসিএলের কোলিয়ারি রয়েছে। পুরো এলাকায় ইসিএল জল সরবারহ করত। একই দৃশ্য দেখা যেত জামুড়িয়ার শ্রীপুর এলাকাতেও। এখন দু’টি জায়গাতেই জলকষ্ট তীব্র।

    তৃণমূল নেতা সাধন রায়, রামসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ইসিএল জল না দেওয়ায় সঙ্কট বেড়েই চলেছে। ইসিএল, সেইলের মতো হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করা সংস্থাগুলি ভুলে যাচ্ছে তাদের সামাজিক দায়িত্ব। মানুষ পর্যাপ্ত জলের জন্য হাহাকার করছে। তাতেও সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে বৃহৎ আন্দোলন দেখা যায়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিচুতলার নেতাদের দাবি, আমরা আন্দোলন করতে পথে নামলেই বড় নেতাদের ফোন আসছে। আন্দোলন তুলে নেওয়ার ‘হু‌ইপ’ জারি হচ্ছে। আসলে ইসিএল যেসব বেসরকারি সংস্থাকে কয়লা উত্তোলনের বরাত দিচ্ছে সেগুলির সঙ্গে প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্টতা রয়েছে। তাই আন্দোলন শুরুতেই থেমে যাচ্ছে। ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’এর টাকা এখন নেতাদের ওয়েলফেয়ারে খরচ হয়। 

    ইসিএলের আইএনটিইউসির শ্রমিক নেতা চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরাও এই সমস্যা দেখছি। সর্বোচ্চস্তরে অভিযোগ করেও সুরাহা হয়নি।   আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, সেইল, ইসিএল নিজেদের এলাকায় জল দেওয়া থেকে পিছিয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে আমাদেরই ট্যাঙ্কারে করে জল পাঠাতে হচ্ছে। বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার বলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাই যদি জল দেবে তাহলে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা, পঞ্চায়েতগুলি আছে কেন? মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। কুলটি সেইল গ্রোথ ওয়ার্কসের সিজিএম শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, জেলাশাসকের নির্দেশে আমাদের জল দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। (চলবে)
  • Link to this news (বর্তমান)