সংবাদদাতা, রামপুরহাট: কিষান মান্ডি থেকে উদ্ধার হল নিখোঁজ এক যুবকের রক্তাক্ত, ফুলে ওঠা মৃতদেহ। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মৃতদেহে অনেকগুলি আঘাতের চিহ্ন। মুখে, মাথায় ছিল আঘাত ও রক্তের দাগ। এই অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেধেছে। চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নলহাটি শহরে।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বিল্লু (২৬) নামে মৃত ওই যুবক গোটা একটা দিন নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর বাড়ি নলহাটি পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছায়াপল্লিতে। চপ কিনতে যাচ্ছি, বলে বাড়ি থেকে বেরনোর পর আর ফেরেননি। মুম্বইয়ে কাজ করতেন বিল্লু। গত বুধবারই সেখান থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন। শনিবার সন্ধে সাতটা নাগাদ মুড়ি দিয়ে খাবেন বলে চপ কিনতে বেরিয়ে যান। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও না ফেরায় বাড়ির লোকেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বিল্লুর মোবাইলে বার বার ফোন করলেও বেজে বেজে থেমে গিয়েছে। রবিবার সকাল থেকে পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ করতে শুরু করেন। কিন্তু সে চেষ্টাও বৃথা যায়। কোথাও খোঁজ পাওয়া যায়নি ওই যুবকের। অন্যদিকে, রবিবার সন্ধে নাগাদ নলহাটির জাতীয় সড়কের ধারে কিষান মান্ডির ভিতরের চাতালে এক যুবকের মৃতদেহ নজরে আসে স্থানীয়দের। পুলিস খবর পেয়ে মৃতদেহটি তুলে ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়। ততক্ষণে ওই মৃতদেহের ছবি স্থানীয়দের কল্যাণে অনেকের মোবাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেরকমই একজনের মোবাইলে ছবি দেখে বিল্লুকে চিনতে পারেন তাঁর পরিবারের লোকজন। কালক্ষেপ না করে তাঁরা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছোটেন। সেখানে মর্গে বিল্লুকে শনাক্ত করেন।
মৃতের পিসি রুবি মুখোপাধ্যায় বলেন, ভাইপোর গলায় কালশিটে দাগ, নাক, মুখ, মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন ও রক্তের দাগ রয়েছে। মুখের বাঁদিকের দাঁত ভাঙা। দেখে মনে হচ্ছে, কেউ বা কারা ভাইপোকে মারধরের পর শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে। যুবকের পিসেমশাই বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, রবিবার সকাল থেকে ভাইপোর মোবাইলে ফোন করা হলেও রিং হয়ে যায়। দুপুর বারোটা নাগাদ বিল্লুর মা ফোন করলে এলাকারই এক যুবক ফোনটি ধরে। বিল্লুর খোঁজ করলে বলে, জানি না। সে আমাকে ফোন দিয়ে কোথায় গিয়েছে বলতে পারব না। দু’ মিনিটের মাথায় ওই যুবক ফোনটা বাড়িতে ফেরত দিয়ে চলে যায়। এরপরই সন্ধ্যা নাগাদ ভাইপোর মৃত্যু সংবাদ পাই। তিনি বলেন, বিল্লু নেশা করত। কিন্তু অতিরক্ত নেশা করে মারা গেলে আঘাতের চিহ্ন কোথা থেকে এল। তাঁরও দাবি, ভাইপো খুন করা হয়েছে। ওই যুবককে ধরে জেরা করলে কিনারা হতে পারে। রাতেই পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ জানান।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কিষান মান্ডি চত্বরে প্রায়ই নেশার আসর বসে। সেই আসরে কোনও কারণে বচসার জেরে ওই যুবককে মেরে ফেলা হয়ে থাকতে পারে। যদিও পুলিসের ধারণা, ওই যুবক বিষ খেয়েছিল। তাঁর মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেরিয়ে আসছিল। পুলিস বলছে, তবুও সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।