৮ শিক্ষিকার চাকরি বাতিলে পড়াশোনা লাটে নলহাটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে
বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মী। নলহাটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষিকার একসঙ্গে চাকরি গেছে। একসঙ্গে এতজনের চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুল চালানো নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষিকা।
ইউনিট পরীক্ষা শেষ হয়েছে সম্প্রতি। স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু শিক্ষিকার অভাবে ক্লাস চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৩০০। জেলার অন্যতম নামী এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সহ ৪১ জন শিক্ষিকার থাকার কথা। কিন্তু বহুদিন ধরেই ১৮টি পদ শূন্য ছিল। তার উপরে একসঙ্গে আটজনের চাকরি যাওয়ায় শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে হল ২৬। আর শিক্ষিকার সংখ্যা কমে ১৪। এমনিতেই উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে কেমিস্ট্রির শিক্ষিকা ছিলেন না। ফিজিক্সের শিক্ষিকাও আগামী সেপ্টেম্বরে অবসর নেবেন। তার উপরে এই রায়ে ফিলোজফি, বায়োলজির কোনও শিক্ষিকা থাকল না। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে গণিত, পিওর সায়েন্স, জীবন বিজ্ঞান, বাংলা ও ইতিহাসের শিক্ষিকাও শূন্য।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গণিত, ফিলোজাফি, বাংলা ও পিওরসায়েন্সের একজন করে এবং ইতিহাস ও জীবন বিজ্ঞান বিষয়ের দুজন করে শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। একসঙ্গে এত শিক্ষিকা চলে যাওয়ায় বিপাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে। একসঙ্গে ৮ জন ‘দিদিমণির’ চাকরি যাওয়ায় হতাশ ছাত্রীরাও। বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়ারা বলে, আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ খুবই ভালো ছিল। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। এক লহমায় সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। কী করে সিলেবাস শেষ করে এগিয়ে যাব তা ভেবেই দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আর কয়েকমাস পরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।
অন্যদিকে অভিভাবক জ্যোৎস্না বিবি বলেন, এমনিতেই স্কুলে শিক্ষিকা কম ছিল। তার উপরে আটজন বাদ পড়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা কীভাবে হবে তা কেউ ভাবল না। যোগ্য শিক্ষকদের কাজে বহাল রেখে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে পরে সেই পদে শিক্ষিকা নিয়োগ করলে এতটা সমস্যা হতো না। আমাদের সাধ্যও নেই যে, প্রতিটি বিষয়ের প্রাইভেট টিউটর দেব। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরকারের দ্রুত সমাধানের পথ খোঁজা উচিত। প্রধান শিক্ষিকা বিদিশা সিনহা বলেন, আটজন শিক্ষিকার চাকরি চলে যাওয়ায় বিজ্ঞান এবং আর্টস বিভাগে কোনও শিক্ষিকা থাকল না। তবে ইংরেজির এক শিক্ষিকা রয়েছেন। একজন করে গণিত, বাংলা ও ইতহাসের নরমাল সেকশনের একজন করে শিক্ষিকা রয়েছেন। তাঁদের পক্ষে তো পুরোটা সামলানো সম্ভব নয়। আর মাধ্যমিকস্তরের শিক্ষিকা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে ক্লাস নেওয়াও সম্ভব হয় না। এদিন নলহাটিতে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে র্যালি থাকায় ছাত্রীদের উপস্থিতি কম ছিল। তাই সকল সেকশনকে এক করে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। কাল থেকে কী হবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি। এর সুরাহা না হলে স্বাভাবিক পঠনপাঠন ব্যাহত হবে। তিনি বলেন, খুবই শীঘ্রই ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের মিটিং ডাকব। তাঁরাই আমাদের পথ দেখাবেন। -নিজস্ব চিত্র