নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মোট ভোটার ৬০৯ জন। তাঁদের ভোটদান নিশ্চিত করার দায়িত্বে ছিল দেড়শো পুলিস। সোমবার ভূপতিনগর থানার অন্তর্গত ইটাবেড়িয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে এভাবেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় নির্বাচন হল। কাঁথির মহকুমা পুলিস অফিসার থেকে ভূপতিনগরের সার্কেল ইন্সপেক্টর, থানার ওসি কে না ছিল। পাঁচ-ছ’টি থানা এবং পুলিস লাইন থেকে ফোর্স নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গন্ডগোল মোকাবিলায় র্যাফ, মহিলাদের বিশেষ বাহিনীও মোতায়েন ছিল। একটা সমবায় ভোটে নিরাপত্তার এই বহর দেখে অনেকেই ঘাবড়ে যান। বেলা ২টায় ভোট শেষ হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার পর ভোট গণনা শেষ হয়। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ইটাবেড়িয়ার ওই সমবায় সমিতির ন’টি আসনেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। সাংগঠনিক শক্তির নিরিখে নিজেদের শক্তপোক্ত এলাকাতে মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি।
ইটাবেড়িয়া ও হরিদ্রাচক মৌজার মোট চারটি বুথের ৬০৯ জন ওই সমবায় সমিতির সদস্য। ইটাবেড়িয়া বাস স্টপ এলাকায় সমিতির অফিস রয়েছে। প্রায় দু’ বছর আগে ওই সমবায় সমিতির বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। এদিন মোট ন’টি আসনে ভোট হয়। তৃণমূল ন’টি, বিজেপি ন’টি এবং সিপিএম তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এভাবে ন’টি আসনে মোট ২১ জন প্রার্থী লড়াই করেছিলেন। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই ইটাবেড়িয়ায় কোণঠাসা তৃণমূল। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১২-৯ মার্জিনে জিতে ওই পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি। তখন থেকে বিজেপি কর্মীদের তাণ্ডব আরও কয়েকগুণ বাড়ে। হেঁড়িয়া থেকে আড়গোয়াল যাওয়ার রাস্তার ধারে ইটাবেড়িয়ায় অঞ্চল তৃণমূলের কার্যালয়। বিজেপির হামলায় সেই পার্টি অফিসের একটিও জানালার কাচ আস্ত নেই। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে শাসক দলের অনেক কর্মী গেরুয়া হামলার শিকার। এরকম একটি এলাকায় সমবায় ভোটে জিতে এদিন তৃণমূল কর্মীরা বিরাট অক্সিজেন পেলেন।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানব পড়ুয়া বলেন, ২০২১ সালে ভগবানপুর বিধানসভা থেকে বিজেপি এই জেলার মধ্যে সর্বাধিক মার্জিনে জয়ী হয়। কিন্তু, ২০২৩ সালে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই এখানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন শুরু হয়। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে আমরা অনেকটাই হারানো জমি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছি। ইটাবেড়িয়ার মতো ওদের শক্ত এলাকাতে বিজেপি ধরাশায়ী হয়েছে। আগামী বছর বিধানসভা ভোট। আমরা ভগবানপুর আসন থেকে জয় নিয়ে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী।
ভগবানপুরের বিধায়ক বিজেপির রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, সমিতির সদস্যপদ দেওয়ার সময় রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করা হয়। একটা সমবায় সমিতিতে সাড়ে পাঁচশো জন ভোট দিয়েছেন। এতে কখনওই সামগ্রিক জনমত প্রতিফলিত হয় না।