• দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে ভেঙে যাওয়া ফুলের দোকান আবার চালু করতে চান দুই বন্ধু
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান শহরের রতনপুরে রাস্তার পাশেই এক চালার একটি ছোটো ফুলের দোকান। হাসান আলি ও ভীম দাস দুই বন্ধু মিলে এই দোকান চালাতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের যোগান দিতেন তাঁরা। পাশাপাশি প্রেমিকপ্রেমিকারা ওই দোকান থেকে ফুল কিনে প্রিয়জনকে উপহার দিত। তা থেকেই দোকানের নাম ধুলিয়ান ফুল ভান্ডার হলেও মুখে মুখে এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মহব্বত কী দোকান’ নামে এলাকায় পরিচিত পেয়েছিল। হাসান ও ভীম দুই বন্ধু মিলে ফুলের ব্যবসা চালাতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতে ফুলের কাজ বা বিয়ের গাড়ি সাজানো সবটাই করত তাঁরা। তাঁদের অধীনে আরও চার-পাঁচজন শ্রমিক ও কাজ করত। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সেই দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের দোকানে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। দোকানে মজুত করা ফুল, ফ্রিজ সহ যাবতীয় সরঞ্জাম ভেঙে চুরমার করে দেয়। আবার তারা দুই বন্ধু মিলে খুলতে চান এই দোকান। পরিচিত শিক্ষক ও বন্ধু বান্ধব তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেয়।

    ১১ দিন আগে সকালে একটু তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান হাসান ও ভীম। বিকেলে ফের দোকান খোলার কথা ছিল তাঁদের। এদিন বিকেলে আচমকাই উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ায় বিকেলে দোকান খুলতে পারেননি ভীমরা। সেদিন কয়েক ঘন্টা পরেই সন্ধ্যায় খারাপ খবর পান তাঁরা। উন্মত্ত জনতা তাঁদের দোকানটি ভাঙচুর চালিয়েছে। দোকানের ভেতরে মজুত করে রাখা কয়েক হাজার টাকার ফুল, ফ্রিজ সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ভেঙে চুরমার করে করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই খবরে ভেঙে পড়েছেন দুই বন্ধু। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হাসান ও ভীম কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এমন অবস্থায় তাদের পাশে এসে দাঁড়ান হাসানের শিক্ষক। ওই শিক্ষক তাঁদের ফের দোকান খোলার পরামর্শ দেন। শিক্ষকের আশ্বাস পেয়ে তাদের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন নতুন করে গড়তে চাইছেন। এ প্রসঙ্গে স্কুল শিক্ষক তথা পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, ওদের বর্তমান পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। হয়তো পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিত। সংগঠনের তরফ থেকে ওঁদের কিছু আর্থিক সহায়তা তুলে দেবার কথা বলেছি। ওরা নিজেদের ব্যবসা আবার নতুনভাবে শুরু করুক। আমরা পাশে আছি।

    হাসান আলি বলেন, প্রায় বছর সাতেক আগে একটি ফুলের দোকানে দু›জনে কাজ করতাম। আমরা দুই বন্ধু একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত রয়েছে। খাওয়া দাওয়া সবই হয়। ভাবলাম লোকের কাছে আর কতদিন খাটবো এবার নিজেরাই কিছু একটা করি। ভালোই চলছিল। কিন্তু এভাবে ক্ষতি হবে ভাবতে পারিনি। তারপরেও হাল ছাড়েনি ওরা। কাঁধে কাঁধ রেখে দুই বন্ধু আবারও নতুনভাবে দোকান শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে। তাঁদের সম্প্রীতির বাঁধন অটুট করে ‹মহব্বত কি দুকান› নতুনভাবে শুরু করতে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বন্ধু বান্ধবরাও। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)