নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: দীর্ঘ টানাপোড়নের পর নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে অপর্ণা নন্দীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নতুন সভাপতি পেলে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা থাকাই দস্তুর। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উলট পুরাণ! সোমবার দিনভর জেলা কার্যালয়ে এলেন না অপর্ণাদেবী। দেখা মিলল না দলের কোনও সাংসদ অথবা বিধায়কের। বেলার দিকে গুটিকয়েক কর্মীর জটলা ছাড়া কিছুই নজরে পড়েনি। অতঃপর, ফের তালা ঝুলল জাতীয় সড়কের ধারে দ্বিতল গেরুয়া ভবনে।
নদীয়ার এই সাংগঠনিক জেলা বিজেপির উত্থানভূমি বলে পরিচিত। বেশ কয়েকটি নির্বাচনে শক্তিবৃদ্ধিও হয়েছে যথেষ্ট। বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের কাঠি পড়বে। তার আগে শক্ত জমিতে সংগঠনের এমন দশা কেন? দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, অনেক নেতা-কর্মী নতুন সভাপতিকে মেনে নিতে পারছেন না। গতকাল তার হাতে গরম প্রমাণও মিলেছে। দলীয় কার্যালয় ঢেকেছে অপর্ণা-বিরোধী পোস্টারে। বিতর্কের শেষ এখানেও নয়। রবিবার রাজ্য বিজেপির তরফে অপর্ণার নাম ঘোষণা করা হলেও সোমবার রাত পর্যন্ত জেলা সভাপতি হিসেবে নিয়োগপত্র পাননি তিনি।
একুশের বিধানসভা ভোট। রাজ্যজুড়ে ঘাসফুলের দাপট অব্যাহত থাকলওে নদীয়া দক্ষিণে পদ্ম ফোটে। সবকটি আসনেই জয় পায় বিজেপি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও দ্বিতীয়বারের জন্য রানাঘাট আসন থেকে নির্বাচিত হন বিজেপি প্রার্থী। এমন শক্ত ঘাঁটিতেও জেলা সভাপতি বাছতে লেজেগোবরে হতে হয় শীর্ষ নেতৃত্বকে। দিনের পর দিন ঠান্ডা লড়াই চলেছে দলের অন্দরে। অবশেষে রবিবার রাতে রাজ্যের ছয় সাংগঠনিক জেলার সভাপতির তালিকায় নাম উঠেছে নদীয়া দক্ষিণের। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে যে মহিলা নেত্রীকে নিয়ে পার্টি অফিসের পোস্টার এবং বিতর্কের ঝড় বয়েছিল, দিনের শেষ দেখা যায় তাঁর উপরই আস্থা রেখেছে রাজ্য নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই জেলার রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, দায়িত্ব পেয়েই অপর্ণা দলের কার্যালয়ে আসবেন। নেতা-কর্মী কিংবা সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করবেন। তাঁকে পেয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবেন সকলেই। ঠিক যেমন অন্যান্যবার হয়ে থাকে। কিন্তু, এদিন দেখা যায়, আর পাঁচটা দিনের মতো বেলা বারোটার পর হাতেগোনা কয়েকজন কর্মীর উদ্যোগে কার্যালয়ের তালা খোলা হয়। প্রথম দিনেই গরহাজির জেলা সভাপতি নিজেই । যদিও অপর্ণার দাবি, আজ স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক। তাই বিধায়করা ছিলেন না। সংসদ জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আসতে পারেননি। সেই কারণেই আজকের মতো পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। তবে শীঘ্রই সমস্ত নেতৃত্বের সঙ্গে বসবেন তিনি।
অপর্ণা একথা বললেও বিজেপিরই একটি সূত্রের দাবি, নতুন জেলা সভাপতিকে নিয়ে ‘অ্যালার্জি’ দলেরই একাংশের। কেননা, তিনি সাংগঠনিকভাবে দলকে কতটা অক্সিজেন জোগাতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান ওই অংশটি। অপর্ণা অবশ্য বলেন, ‘কেউই অখুশি নন। বরং নাম ঘোষণা হওয়ার পর তিনি প্রচুর শুভেচ্ছা পেয়েছেন। প্রত্যেকেই তাঁকে মেনে নিচ্ছেন।’ এদিকে, অপর্ণা ছিলেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সাংগঠনিক জেলার একেবারে শেষপ্রান্ত, নবদ্বীপের বাসিন্দা তিনি। সেখান থেকে বাকি জেলা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? এমন প্রশ্নও নিচুতলার কর্মীদের বেশ ভাবাচ্ছে। অপর্ণা বলেন, ‘জেলার যে কোনও জায়গার বাসিন্দাই সভাপতি হতে পারেন।’