• দিবানিদ্রায় ভূমিদপ্তর, দেদার বালি লুট কাঁটাবেড়া ঘাটে
    বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই জেসিবি দিয়ে দেদার বালি উত্তোলন চলছে পুরুলিয়া-১ ব্লকের কাঁটাবেড়া বালিঘাটে। এ নিয়ে বহু প্রতিবাদ, আন্দোলন করেছেন স্থানীয়রা। সরকারি দপ্তরে নিজেদের অভিযোগের কথাও জানিয়েছেন। তবুও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা কোনও পদক্ষেপই করছেন না বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, বালি মাফিয়াদের মদত দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরেরই একাংশ।

    স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি মাসের প্রথম থেকেই কাঁটাবেড়ায় কংসাবতী নদীর উপর বালি উত্তোলন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর ভিড় করছে বালিঘাটে। নদীবক্ষ থেকে জেসিবি মেশিন দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। তারপর তা ট্রাক্টরে বোঝাই করে চলে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা দিয়েই। স্থানীয় বাসিন্দা বাদলচন্দ্র মাহাত বলেন, এমনিতেই গ্রামের রাস্তা ভাঙতে শুরু করেছে। এভাবে যদি দৈনিক শতাধিক ট্রাক্টর চলাচল করে, তাহলে রাস্তার আর কি কিছু অবশিষ্ট থাকবে? স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ মাহাতর দাবি, ওই এলাকা থেকে ২০০মিটার দূরেই কংসাবতীতে দু’টি জলপ্রকল্প আছে। ওই জলপ্রকল্পের জন্যই আশপাশের গ্রামগুলিতে আজ পানীয় জলের সমস্যা মিটেছে। কিন্তু এভাবে মেশিন দিয়ে বালি তোলা হলে আগামী দিনে জলসঙ্কটে পড়বেন বাসিন্দারা।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মেশিন দিয়ে কখনই বালি তোলা যায় না। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাহলে কীভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলনের সাহস হচ্ছে ইজারাদারদের? বিষয়টি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদেরও অজানা নয়। তাঁরা পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। যদিও তাঁরা কোনও পদক্ষেপ যে করেননি, তা বালিঘাটে গেলেই বোঝা যায়। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, ‘প্রশাসনের একাংশের মদত না থাকলে কখনই জেসিবি দিয়ে বালি উত্তোলন সম্ভব নয়। আসলে বালির বখরা প্রশাসনের সর্বস্তরে পৌঁছে যায়। সময়ে প্রসাদ পেয়ে গেলেই সবাই চুপ।’ অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর) রাজেশ রাঠোর বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’ প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী, বালি উত্তোলনের ক্ষেত্রে মেশিনের বদলে স্থানীয় শ্রমিকদের কাজে অগ্রাধিকার থাকবে। সেই নিয়মও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বালি উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনও সীমানাই মানা হচ্ছে না। যেখান সেখান থেকে বালি তোলা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে বড় বড় গর্ত।

    কাঁটাবেড়ার বাসিন্দা তথা ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাত। তিনি বলেন, বালি উত্তোলনের এলাকা পিলার দিয়ে চিহ্নিত করার কথা ছিল। নদীর দুই পাড় থেকে কয়েক মিটার ছেড়ে বালি তোলার কথা। সেসব মানা হচ্ছে না মোটেই। এ নিয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতেও গিয়েছিলাম। উল্টে আমাদেরই আধিকারিকদের তিরস্কারের মুখে পড়তে হয়। দপ্তরের এক পদস্থ আধিকারিক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বালি ইজাদারদের যেন আমরা ‘ডিস্টার্ব’ না করি।  
  • Link to this news (বর্তমান)