পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: ২০০৬ সালে টানা কয়েকদিন খবরের কাগজের শিরোনামে থাকা গাঙটিকুলির কথা এখন অনেকেরই মনে নেই। দামোদর ও বরাকর নদীর সঙ্গমে অখ্যাত এই দ্বীপের কথা তাঁরা ভুলে গিয়েছেন। অবশ্যই সবার আগে ভুলেছেন নেতারা! তাই তো ডিজিটাল যুগেও এই দ্বীপে যে বিদ্যুৎ মেলেনি, সেকথা খেয়াল নেই কারও!
পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকে গাঙটিকুলি দ্বীপ রয়েছে। পুরুলিয়া ও পশ্চিম বর্ধমানের সংযোগকারী দিশেরগড় সেতু থেকেই দ্বীপটি দেখা যায়। প্রায় ৮৫০একর জায়গাজুড়ে চারদিকে জলবেষ্টিত দ্বীপটি রয়েছে। গাঙটিকুলিতে একসময় বেআইনিভাবে কয়লা তোলা হতো। সিপিএমের তৎকালীন বহু নেতা, পুলিস এই বেআইনি কারবারে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। ২০০৬ সালের ৩১জুলাই শ্রমিকরা সেই খাদানেই কয়লা তুলতে নেমেছিলেন। আচমকা দামোদরের জল হুহু করে খাদানে ঢুকতে থাকে। কেউই আর ভিতর থেকে উঠে আসতে পারেননি।
দুর্ঘটনার কথা জানাজানি হলে বিক্ষোভ, আন্দোলন-কত কিছুই হয়। নেতামন্ত্রী, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থার আধিকারিক, পুলিসকর্তারা এলাকায় আসেন। উদ্ধারকাজের জন্য হেলিকপ্টার পাঠায় কেন্দ্র। নামানো হয় সেনা। নিরাপত্তার খাতিরে দেহ সমেত ধস এলাকা ভরাট করে দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় কতজনের মৃত্যু হয়েছিল, সেই তথ্য এখনও সামনে আসেনি। কেউ বলেন ১০জন, কেউ বলেন শতাধিক। অভিযোগ, টাকা দিয়ে অনেক মৃতের পরিবারের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই তো কাছের মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাতেও শব্দ করে কাঁদতে পারেননি অনেকে।
এখন গাঙটিকুলিতে ১২-১৫টি পরিবারের বসবাস। প্রায় ৪০জনের বেশি ভোটার রয়েছেন। বাসিন্দারা জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা কয়লা তোলার সূত্রেই এই দ্বীপে বসবাস শুরু করেছিলেন। যাতায়াতে বাসিন্দাদের ভরসা পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া দু’টি নৌকা। বাজারহাট, রেশন আনতেও নৌকায় নদী পেরিয়ে শালতোড়ায় যেতে হয়। দ্বীপের পড়ুয়াদেরও নদী পেরিয়েই স্কুলে যেতে হয়। দ্বীপে এখনও বিদ্যুতের আলো জ্বলে না। হ্যারিকেন, মোমবাতির আলোতেই পড়াশোনা করতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, বহু জায়গায় দরবার করার পর ২০১৮-’১৯ সাল নাগাদ প্রশাসনের উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তখনই গ্রামে প্রথম বিদ্যুতের আলো জ্বলেছিল। কিন্তু, দু’বছরের মধ্যেই যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যায়। তারপর আর তা সারাতে উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দা আশা কৈরি, সঞ্জয় সাউ বলেন, বিদ্যুতের জন্য আমরা প্রশাসনের সর্বস্তরে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু, আমাদের কথা ভাবার মতো সময় কী কারও রয়েছে!
নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব বলেন, ওই দ্বীপের বাসিন্দারা সত্যিই খুব সমস্যায় রয়েছেন। জেলাপরিষদের তরফে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছিল। তারপর হঠাৎ যন্ত্রটি খারাপ হয়ে যায়। কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় দেখছি।