আংশিক তালিকা দিতে চাইল এসএসসি, নারাজ চাকরিহারারা, যোগ্য-অযোগ্য বিভ্রাটে ধুন্ধুমার
বর্তমান | ২২ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষক তালিকা প্রকাশের দাবিতে ধুন্ধুমার বাঁধল সল্টলেকে এসএসসি’র সদর কার্যলয় আচার্য সদনে। কয়েক হাজার চাকরিহারা সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখলেন গোটা ভবন। পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘেরাও কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা।
এদিন সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে দুপুর দেড়টা নাগাদ এসএসসি ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এসএসসি অফিসের সামনে পৌঁছনোর পর ভেতরে যাওয়ার জন্য পুলিসের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন তাঁরা। কখন তালিকা প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে কোনও সদুত্তর না মেলায় এসএসসি অফিসের সামনেই অবস্থানে বসেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়া শিক্ষকদের সামাল দিতে বেগ পেতে হয় পুলিসকে। নিজেদের মধ্যে অনেক বাগবিতণ্ডার পর শেষ পর্যন্ত চাকরিহারারা মোট ১৩ জনের প্রতিনিধি বেছে চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। ঘণ্টা দেড়েক বাদে এসএসসি ভবনের সামনে রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাইরে থাকা তাঁদের সতীর্থদের ফোনে জানান, আপাতত প্রথম তিনটি কাউন্সেলিংয়ের তালিকা প্রকাশ করবে এসএসসি। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, শিক্ষক নিয়োগের সময় মোট ১২টি কাউন্সেলিং হয়। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য সাতটি এবং একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগের জন্য পাঁচটি কাউন্সেলিং। নিয়ম অনুযায়ী, তার মধ্যে নবম-দশমের প্রথম তিনটি কাউন্সেলিংয়ের প্যানেলেরই মেয়াদ ছিল। আর উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ছিল প্রথম দু’টি। বাকিগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বাকি প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের ব্যাপারে এখনও আইনি অনুমোদন মেলেনি বলেই এসএসসি’র দাবি। তবে, প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কোনও তালিকা প্রকাশ হয়নি। চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই চলবে এসএসসি। যে সমস্ত শিক্ষকরা চাকরি করছিলেন তাঁরা বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বেতন পাবেন।
এসএসসির এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা। তাঁদের অভিযোগ, এইভাবে চাকরিহারাদের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে আন্দোলনের শক্তি খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, প্রথম তিনটির পর যে প্যানেলগুলি থেকে নিয়োগ করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ আদালতের নির্দেশে। তাহলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলের তথ্য প্রকাশে বাধা কোথায়?
এদিকে, এদিন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সামনে জমায়েত করেন গ্রুপ সি ও ডির যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরাও। পরে তাঁরা পর্ষদের চেয়ারম্যান রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বিষয়টি নিয়ে পর্ষদকে ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার দাবি জানান। এব্যাপারে অবশ্য তাঁদের কোনও অশ্বাস দেয়নি পর্ষদ। তাই প্রথমে সভাপতির ঘরেই অবস্থান করেন প্রতিনিধিরা। পরে করুণাময়ী মোড়ে অনশন অবস্থানে বসে যান আন্দোলনকারীরা।
অন্যদিকে, এই ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কেন কার্যকর করা হচ্ছে না, এদিন সেই প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত শিক্ষকদের বেতন ফেরত দিতে হবে। সেই নির্দেশ কার্যকর না করায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছিল। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন এসএসসি ও পর্যদের কাছে জানতে চেয়েছে, কেন নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে না? পাশাপাশি অযোগ্যদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি, সিবিআইকেও একই প্রশ্ন ডিভিশন বেঞ্চের।