নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: সোমবার দুপুরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে গেল হাওড়ার ডোমজুড়ের একটি কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি। ওই কারখানায় রং তৈরির প্রচুর রাসায়নিক উপাদান মজুত থাকায় নিমেষে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। এই বিধ্বংসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে একে একে ছুটে যায় দমকলের প্রায় ২০টি ইঞ্জিন। বিশাল পুলিস বাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান হাওড়া সিটি পুলিসের উচ্চপদস্থ কর্তারা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় দমকল কর্মীরা আগুন বাগে আনতে পারলেও পুরোপুরি নিভতে রাত পেরিয়ে যায়।
ডোমজুড়ের দক্ষিণ ঝাঁপড়দহের নীলাঞ্জনা পার্কের কাছে প্রায় দশ বিঘা জমিতে একটি রাসায়নিক তৈরির ফ্যাক্টরি রয়েছে। ওই কারখানায় রং তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল, থিনারের মতো উচ্চ দাহ্যের তরল তৈরি হতো। অন্যান্য দিনের মতো এদিন দুপুরেও কারখানায় কাজ চলছিল। দমকল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর আড়াইটে নাগাদ আচমকা কারখানার ভিতরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। ছাদ ফুঁড়ে আগুন প্রায় দশতলা বিল্ডিংয়ের সমান উঠে যায়।
উচ্চ দাহ্যের রাসায়নিক মজুত থাকার ফলে দাউ দাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা কারখানায়। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলকা। প্রায় দু’ কিলোমিটার দূর থেকে কুণ্ডলীকৃত কালো ধোঁয়া দেখা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে কারখানার ভিতর থেকে শ্রমিকদের বের করে আনেন। জেলার বিভিন্ন দমকল কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০টি ইঞ্জিন যায়। জলের পাশাপাশি ফোম স্প্রে করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন দমকল কর্মীরা। ওই কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির পাশেই বিস্কুট তৈরির কারখানা। আশপাশে রয়েছে আরও কারখানা। সেখানে জ্বলন্ত রাসায়নিকের ছিটে গিয়ে পড়ে। সেখানেও জল ছিটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। তবে আশপাশে কোনও বসতি না থাকায় প্রাণহানির মতো বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল।
হাওড়ার ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার রঞ্জনকুমার ঘোষ বলেন, ‘আগুনের খবর পাওয়া মাত্রই বিভিন্ন জায়গা থেকে দমকলের ইঞ্জিন নিয়ে আসা হয়। প্রচুর রাসায়নিক থাকায় বেশ কিছু অংশে পকেট ফায়ার রয়ে গিয়েছে। তবে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। কারখানাটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে দেখা হবে।’
এদিকে, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ পঞ্চায়েতের প্রধান আশিস আহেরি দাবি করেন, ‘এই কারখানা ঠিকমতো কর জমা করে না। কারখানার ভিতরে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল কি না, তা খতিয়ে রাখা উচিত।’ আগুন লাগার খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে আসে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের তরফে নাসিম হোসেন পাল্টা দমকলের সক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লেগেছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে দমকল ঢুকেছে। তাঁরা না আসা পর্যন্ত কারখানার কর্মীরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।’ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তা এখনও স্পষ্ট করে জানায়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। - নিজস্ব চিত্র