• ‘ব্রিগেডের তারকা’ নিয়ম করে আজও ছাগল চরান মাঠে
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী, গুড়াপ

    বাম জমানায় সরকারের কাছ থেকে এক চিলতে জমি পাট্টা পেয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। বাবা লক্ষ্মীনারায়ণ টুডু ছিলেন ক্ষেত মজুর। মা চাঁদমনি ছিলেন সিপিএম পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী। মায়ের হাত ধরেই সিপিএম পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।

    তখন অবশ্য রাজনীতির অ, আ, ক, খ বুঝতেন না। আদিবাসী ঘরের সেই ছোট্ট মেয়েটি যে একদিন কলকাতার ব্রিগেড ময়দান কাঁপাবে, তা বোধহয় কোনও দিন কল্পনাও করেননি পা়ডা প্রতিবেশীরা। রবিবার বামেদের ব্রিগেড সভায় ঝাঁঝালো ভাষণ দিয়ে রাতারাতি বাম নেতা–কর্মীদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন সিপিএমের উদীয়মান নেত্রী বন্যা টুডু।

    হুগলির গুড়াপ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান বন্যার বাপের বাড়ি দাদপুর থানার সেনেট গ্রামে। যদিও এখন তিনি থাকেন গুড়াপের হাজিগড়ে নিজের শ্বশুর বাড়িতে। এলাকার দাপুটে সিপিএম নেত্রী হিসেবে সকলেই তাঁকে চেনে। দু’–দু’বার তিনি পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।

    ব্রিগেড মঞ্চে তাঁর মেঠো বক্তৃতা শুনে তারিফ করছেন সকলে। তাঁর সঙ্গে সিপিএম নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরও তুলনা টানছেন অনেকে। যদিও রাজনীতির ময়দানে তাঁর এই সাফল্য একদিনে আসেনি। রীতিমতো সংগ্রাম করে তিনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন।

    যেখানে তাঁর ছোটবেলা কেটেছে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এক ফালি জমিতে চাষবাস করে বন্যা এবং তাঁর তিন ছেলেকে মানুষ করেছেন লক্ষ্মীনারায়ণ টুডু। একটু বড় হওয়ার পরে বাবা–মায়ের সঙ্গে বন্যা নিয়মিত মাঠে চাষের কাজে যেতেন। বাড়িতে গরু ও ছাগল চাষ করতেন। কিশোরী বয়সে বন্যার সঙ্গে বিয়ে হয় গুড়াপের হাজিগড়ের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক জয়দেব টুডুর।

    ভাসুর কালীরাম টুডুও ছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতা। তার জন্য বাড়িতে পার্টির নেতা–কর্মীদের আনাগোনো লেগেই থাকতো। বাড়ির বউ হিসেবে বন্যা তাঁদেরকে চা, জল দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। লুকিয়ে বৈঠক শুনতেন। মাঝে মধ্যে স্থানীয় স্তরে পার্টির কর্মসূচিতে হাজির হতেন। তারই সুবাদে স্থানীয় সিপিএম নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়।

    তারপরে আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে জিতে গুড়াপ পঞ্চায়েতের প্রধান হন। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে গোটা হুগলি জেলায় বামেদের প্রভাব কমলেও বন্যার জনপ্রিয়তা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তাতে অবশ্য বন্যার রোজনামচা একটুকুও বদলায়নি।

    বন্যা বলেন, ‘আদিবাসী বাড়ির মেয়েরা পার্টি করবে, দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে যাবে, এটা সবাই ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু আমি মায়ের হাত ধরে সিপিএমের মিছিলে যেতাম। বিয়ের পরেও পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়িনি। মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। তাই পার্টিটা করি। এখন দল ক্ষমতায় নেই। কিন্তু আমাদের মতো মেহনতি কর্মীরা আছেন, যাঁরা দলকে ভালোবাসেন।’ তাঁকে নিয়ে চর্চা হলেও তিনি অবশ্য নিজের স্বত্তা এখনও ধরে রেখেছেন। বললেন, ‘আগে গরু, ছাগল দুই–ই প্রতিপালন করতাম। এখন শুধু ছাগল চাষ করি। নিয়ম করে মাঠে ছাগল চরাতে যাই।’

    ধনেখালি সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুনীল বাগ বলেন, ‘শ্রেণিগত দিক থেকে বন্যা দলের নেতা কর্মীদের কাছে একজন আদর্শ নেত্রী। বুক চিতিয়ে এখনও পার্টিটা করে যাচ্ছেন। এই ধরনের নেতা–কর্মী বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

  • Link to this news (এই সময়)