• ক্লাসরুমে বাহিনী, পড়ুয়ারা যাবে কোথায়? স্কুলছুট বাড়ার আশঙ্কা
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, বহরমপুর: ধুলিয়ান এবং হিংসা কবলিত এলাকায় ১১ এপ্রিল শেষ স্কুলে গিয়েছিল পড়ুয়ারা। এত দিন অশান্তির পরে সোমবার স্কুল খুললেও পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ধুলিয়ান পুর–এলাকার অধিকাংশ স্কুলের দখল নিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ক্লাসরুমে থাকছেন জওয়ানরা। ফলে স্কুল খুললেও ক্লাস কোথায় হবে?

    ধুলিয়ান পুর–এলাকার স্কুলগুলিতে এ দিন ছাত্রদেরই দেখা গিয়েছে। ছাত্রীরা কেউই যায়নি। শিক্ষক–শিক্ষিকাদের আশঙ্কা, গার্লস স্কুলের এই হাল হলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে পারে।

    ধুলিয়ানের কাঞ্চনতলা জেডিজে ইনস্টিটিউশনে পড়ুয়া প্রায় ৬ হাজার। এ দিন হাজির ছিল সাকুল্যে ৬০০ জন। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মাসুদ রহমান বলেন, ‘তিনতলা স্কুলের পুরোটাই বাহিনীর দখলে। স্কুল খুললেও ক্লাস করার মতো পরিবেশ নেই। স্কুল ইউনিফর্ম বিলি হবে জেনে ৬০০ জন এসেছে। ছাত্রী কেউ আসেনি।’ লাইব্রেরি, স্টেজ, কম্পিউটার রুম, বারান্দার মেঝেতে বসে ক্লাসও হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মিড-ডে মিল খাওয়ার জায়গাটাও বাহিনীর দখলে। বারান্দাতেই খাইয়েছি।’

    সামশেরগঞ্জ ও সুতির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএসএফকে ডাকা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে অন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন হয়। তার পর থেকেই বিভিন্ন স্কুল জওয়ানদের দখলে।

    সামশেরগঞ্জের সাহেবনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ এনাউদ্দিন আলির কথায়, ‘স্কুলের দুটো বিল্ডিংয়ের একটিতে বাহিনী রয়েছে। অন্যটিতে ফাইভ থেকে টেনের ক্লাস হয়েছে। সাড়ে পাঁচ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে হাজির ছিল মাত্র ৫০০। একাদশ–দ্বাদশে ভর্তি পিছিয়ে দিতে হয়েছে। প্রথম ইউনিট টেস্ট এখনও বাকি। কবে হবে, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ একাদশ–দ্বাদশে ভর্তি ১৪ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দপ্তর। এই পরিস্থিতিতে তা বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল করা হয়েছে।

    সুতির জয়কৃষ্ণপুর এবিএস বিদ্যাপীঠ গত বুধবার খুললেও ছাত্র–শিক্ষক কেউই আসেনি। এ দিন সাড়ে চার হাজার পড়ুয়ার মধ্যে এসেছিল ৫০ জন। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হুমায়ুন আলি বলেন, ‘আতঙ্ক ও গুজব গ্রাস করেছে। অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন।’ ধুলিয়ান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জয়শ্রী দত্ত জানিয়েছেন, বাহিনী কবে যাবে, অনিশ্চয়তা রয়েছে। বাহিনী গেলেই স্কুল খোলা যাবে না।

    তাঁর কথায়, ‘স্কুল সাফ-সুতরো করারও ব্যাপার রয়েছে। নবম-দশমের প্রথম ইউনিট টেস্ট শেষ হয়নি। নেট বন্ধ। একাদশের পড়ুয়াদের নম্বর এন্ট্রি বাকি। দ্বাদশে ভর্তি প্রক্রিয়া থমকে।’ স্কুলে ২০২৪–এ ৩০ জন ছাত্রী স্কুলছুট ছিল। জয়শ্রী বলছেন, ‘বিড়ি শ্রমিক ও পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের মেয়েরা পড়তে আসে। বেশিরভাগই আসে মিড-ডে মিলের টানে। দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকলে স্কুলছুট বাড়বে।’

    ধুলিয়ান বাণীচাঁদ আগরওয়ালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কাকলি ঘোষ বলছেন, ‘দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনা ছাড়িয়ে বিয়ে দিতে আগ্রহী হবেন অভিভাবকেরা।’ স্কুলে বিএসএফ রয়েছে জানিয়ে কাকলি বলেন, ‘নবম-দশমের একটা বিষয়ের ইউনিট টেস্ট বাকি। কবে নিতে পারব, জানি না।’ কেকেএসকে স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আবদুল কবিরের কথায়, ‘বাহিনী না যাওয়া পর্যন্ত স্কুল খোলা অনিশ্চিত। এত দিন স্কুল বন্ধ থাকলে সিলেবাস শেষ হবে না।’

    এত কথার ফাঁকে বেজে উঠল ছাত্রীর ফোন — রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে না?

  • Link to this news (এই সময়)