এই সময়: আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ইতিহাসে নবীনতম নেতা হিসেবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি–র উপস্থিতিতে সোমবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ১৫ জনের যে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে, তাতে মীনাক্ষী জায়গা পেয়েছেন। এ ছাড়া রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন মুখ হিসেবে এসেছেন পূর্ব বর্ধমানের কৃষক নেতা সৈয়দ হোসেন।
কিছু দিন আগেই মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন মীনাক্ষী। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সোমবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন দুই সদস্য হিসেবে মীনাক্ষী ও সৈয়দ হোসেনের নাম প্রস্তাব করেন।
পুরোনো মুখ সরিয়ে নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার যে উদ্যোগ চলছে, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে মীনাক্ষীর জায়গা পাওয়া তারই প্রতিফলন বলে সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য। সেলিমের কথায়, ‘ধারাবাহিক ভাবে আমরা নতুন প্রজন্মকে সামনে আনছি। গত বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে মীনাক্ষীর অন্তর্ভুক্তি সেই ধারার অঙ্গ।’
উল্লেখ্য, সিপিএমের ডানকুনি রাজ্য সম্মেলনে যে নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হয়েছে সেখানে মীনাক্ষী ছাড়াও সৃজন ভট্টাচার্য, ময়ূখ বিশ্বাস, প্রতিকউর রহমানের মতো নবীন প্রজন্ম স্থায়ী সদস্য হয়েছেন।
মীনাক্ষী কিংবা বন্যা টুডুর মতো নতুন মুখকে যে বাম জনতাও দেখতে চাইছে, তার ইঙ্গিত রবিবারে বাম ব্রিগেডে দেখা গিয়েছে। বামেদের চরম দুর্দিনে এপ্রিলের চাঁদিফাটা রোদের মধ্যেও রবিবার লক্ষাধিক জনতা ব্রিগেডে হাজির হয়েছিলেন। মূল সমাবেশ শুরু হয়ে যাওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে সেই জনতা প্রথম মৃদু হাততালি দেয় যখন খেতমজুর সংগঠনের নেতা, লোকসভা ভোটের আগে জেলখাটা, নিরাপদ সর্দার বলতে ওঠেন।
এই জনতা ফের বন্যা টুডুর ভাষণের সময়ে জোরালো হাততালি দিয়েছে। পোড়খাওয়া বক্তা হওয়ার সুবাদে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জনতার হাততালি কুড়িয়েছেন। কিন্তু সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু, কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার, বস্তি সংগঠনের নেতা সুখরঞ্জন দে ভাষণ দেওয়ার সময়ে ব্রিগেডে কোনও হেলদোল, তাপ–উত্তাপ দেখা যায়নি।
বছরখানেক আগে সিপিএমের ছাত্র–যুব সংগঠনের ব্রিগেডে মীনাক্ষী, সৃজনের ভাষণের সময়ে জনতা অনেক বেশি আলোড়িত হয়েছিল। পাকা চুলের পুরোনো মুখের বদলে নতুন মুখের কথা যে বাম জনতা শুনতে চায়, সে ইঙ্গিত তখনই মিলেছিল। এটাই যে ট্রেন্ড, তা রবিবার বন্যা টুডু ও নিরাপদ সর্দারের ভাষণের সময়ে জনতার হাততালি ফের বুঝিয়ে দিয়েছে। সেলিমের পর্যবেক্ষণ, ‘ব্রিগেড সমাবেশে এঁরা নতুন মুখ, মানুষ তাঁদের কথায় সাড়া দিয়েছেন।’
সিপিএমের আর এক তরুণ মুখ সৃজনের কথায়, ‘নতুন মুখ কী বলেন তা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ থাকে। নতুন প্রজন্ম নতুন ভাষায় কথা বলে। তবে বামপন্থী রাজনীতিতে বক্তার থেকে বক্তব্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
নতুন মুখ এবং মীনাক্ষীর মতোই মেঠো ভাষায় বক্তৃতা করার জন্য বন্যা টুডু বাম ব্রিগেডে সাড়া পেয়েছেন বলে মনে করছেন খেতমজুর নেতা নিরাপদ সর্দার। সন্দেশখালির কঠিন মাটি থেকে উঠে আসা নিরাপদর কথায়, ‘বন্যা গাঁয়ের মানুষের ভাষায় তাঁদের সমস্যার কথা বলেছেন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। বন্যার কথায় তাই ব্রিগেডের জনতা সাড়া দিয়েছে।’