• নবকলেবরে সাজছে হাওড়া স্টেশন, বাড়ছে প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া

    প্রতি বছর ট্রেন যাত্রীদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সেই ভিড় সামাল দিতে বাড়ানো হচ্ছে ট্রেনের সংখ্যা। কিন্তু হাওড়া স্টেশন রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা না বাড়ায় হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। প্ল্যাটফর্ম পাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনের বাইরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে ট্রেনগুলিকে। তার জেরে দুর্ভোগে পড়ছেন ট্রেন যাত্রীরা।

    এই সমস্যা মেটাতে হাওড়া স্টেশনের খোলনলচে বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। তারই অঙ্গ হিসেবে হাওড়া স্টেশনের একাধিক প্ল্যাটফর্মের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা। ট্রেন চলাচল মসৃণ করতে জংশন পয়েন্টের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।

    রেল সূত্রের খবর, হাওড়া স্টেশনে বর্তমানে ২৩টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের ট্রেন দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বাকি যে প্ল্যাটফর্ম রয়েছে তার দৈর্ঘ্য কম হওয়ায়, সেখানে বড় বড় দূরপাল্লার মেল–এক্সপ্রেস ট্রেন (২৪ কোচের) দাঁড়াতে পারে না। অথচ, প্ল্যাটফর্মের অভাবে ট্রেনগুলিকে মাঝ পথে দাঁড় করিয়ে রাখতে হচ্ছে।

    এই সমস্যা মেটাতে হাওড়া স্টেশনের ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। একই ভাবে ১৬ ও ২৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মটি রয়েছে হাওড়া স্টেশনের ওল্ড কমপ্লেক্সে। ২৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মটি নিউ কমপ্লেক্সে অবস্থিত। হাওড়া স্টেশনে যাতে আরও বেশি সংখ্যক ট্রেন দাঁড়াতে পারে তার জন্য নিউ কমপ্লেক্সে আরও একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরিরও ভাবনা–চিন্তা করছে রেল।

    রেলের এক কর্তার ব্যাখ্যা, পূর্ব রেলের সাতটি লাইন দিয়ে ট্রেনগুলি সোজা হাওড়া স্টেশনে ঢুকতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ–পূর্ব শাখার ট্রেনগুলিকে অনেকটা ঘুরে যেতে হয়। হাওড়া স্টেশনে ঢোকার কিছুটা আগে চাঁদমারি ব্রিজের কাছে রেলের মোট ৯টি জংশন পয়েন্ট রয়েছে। হাওড়া–খড়্গপুর শাখার ১৬১ জোড়া লোকাল ট্রেন এবং ৪৫ জোড়া দূরপাল্লার ট্রেন ওই সব জংশন পয়েন্ট দিয়ে হাওড়া স্টেশনে ঢোকে।

    বলা ভালো, এগুলো হলো হাওড়া স্টেশনের প্রবেশ দ্বার। জংশন পয়েন্টের সংখ্যা যত বেশি হয় ট্রেনের যাতায়াতের পথ ততই মসৃণ হয়। কিন্তু জায়গার অভাবে এতদিন জংশন পয়েন্টের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছিল না। তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল রেললাইনের উপর আড়াআড়ি অবস্থিত বাঙ্গালবাবু ব্রিজ।

    সেজন্য এই ব্রিজটিকে ভেঙে ফেলা হবে। তার জায়গায় নতু‍ন ব্রিজ তৈরি হচ্ছে। ফলে আরও দু’টি নতুন জংশন পয়েন্ট তৈরি করা সম্ভব হবে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে হাওড়া–খড়্গপুর শাখায় ট্রেন যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে বলে আশা করছেন রেলকর্তারা।

    হাওড়ার ডিভিশনের ডিআরএম সঞ্জীব কুমার বলেন, ‘হাওড়া ডিভিশনের ১০০ বছর উপলক্ষে ট্রেন চলাচলে গতি আনতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ সময়ে যাতে ট্রেন চলে, তার জন্য হাওড়া স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের সংখা বাড়ানো হচ্ছে৷ এ ছাড়া বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হচ্ছে যাতে দুরপাল্লার ট্রেনগুলিকে সেখানে ঢোকানো যায়। চাঁদমারি ব্রিজ ও বামুনগাছি রেল ব্রিজের কাজও এ বছরের মধ্যেই শেষ করা হবে। তাতে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।

    দক্ষিণ–পূর্ব রেল যাত্রীদের সংগঠন হাওড়া–খড়্গপুর প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অজয় দোলুই বলেন, গত সপ্তাতে রেল কর্তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানেও দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে বলে রেলের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কবে এই সমস্যা মিটবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।’

  • Link to this news (এই সময়)