• ভূত গেল কোথায়, জঙ্গলে রাত জাগাই সার!
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, পুরুলিয়া: গুজবটা রটেছিল অর্জুনতোড়ার এক বাসিন্দার মুখে শোনা গল্প থেকে। তিনি না কি ভূত দেখেছেন! গরমের ভরা দুপুরে জঙ্গল‍ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে পেশায় স্কুলের সামনে ঘুগনি এবং নানারকম খাবার বিক্রি করা ওই ব্যক্তির মোটরবাইক বিগড়ে যায়। সেই সময়ে প্রবল হাওয়া বইছিল, আচমকা জঙ্গলের ভিতর থেকে প্রায় সাড়ে তিন ফুটের অদ্ভুতদর্শন এক লোমশ প্রাণী বেরিয়ে এসে সেই ব্যক্তিকে আঁচড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যায়!

    ব্যস! নিমেষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, হুড়ার রাকাবের জঙ্গলের রাস্তার পাশে তেঁতুল গাছে রয়েছে ভূত! সে আবার মানুষকে দেখাও দিচ্ছে! এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা দাবি করতে থাকেন, তাঁরাও নাকি ভূত–দর্শন করেছেন! ওই জঙ্গলে কিছুদিন আগে এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছিল। ফলে ভূতের আগমন যে মোটেও বানানো গল্প নয়, তেমনটাই ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে।

    এলাকা জুড়ে এমনই ভূত–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পরে আসরে নামেন ভারতীয় বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদী সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। তাঁরা ঠিক করেন, ভূত খুঁজে বের করতে তারা ওই তেঁতুল গাছের নীচে বসে রাত কাটাবেন। সেই মতো রবিবার এই দু’সংস্থার আট সদস্য সেখানে হাজির হন। সঙ্গে ছিল দড়ি, বিভিন্ন রঙের টর্চ এবং লাঠি।

    নিশুতি রাতের জঙ্গল, নিকষ অন্ধকার। মাঝেমধ্যে কানে আসছে কর্কশ ডাক। কখনও নড়ে উঠছে কোনও গাছের ডাল। শব্দের উৎস ধরে আট সদস্য টর্চের আলো ফেলে কোথা থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে, তা বোঝার চেষ্টা করেন। কেউ আবার তেঁতুল গাছের ঘন ডালের ভিতরে আলো ফেলে দেখার চেষ্টা করেন, ভূত বাবাজি কোথায় ডেরা বেঁধেছে।

    কিন্তু রাত জাগাই সার! কোথায় ভূত? জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম কেশরগড়ের পাঁচ পুরুষের বাসিন্দা নরেন চক্রবর্তী গোটা ঘটনা শুনে অবাক। বলে উঠলেন, ‘ছোটবেলায় শুনেছি, রাকাবের জঙ্গলকে ১৬ ক্রোশের জঙ্গল বলা হতো একটা সময়ে। খুব গভীর ছিল সেই জঙ্গল, দিনের বেলাতেই সেখানে রোদ ঢুকত না। লোকমুখে অনেক ডাকাতের গল্পও শুনেছি। কিন্তু তাই বলে ভূত? কোনওদিন শুনিনি।’

    একই কথা শোনা গিয়েছে অর্জুনজোড়া হাই স্কুলের ছাত্র তুষার বাউড়ি, এলাকার বাসিন্দা বিষ্ণুপদ বাউড়ির মুখেও। বিষ্ণুপদ বলছেন, ‘আমি তো ছোটবেলা থেকে এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছি। দিনের বেলা তো বটেই, সন্ধেবেলাতেও এই তেঁতুল গাছের পাশ দিয়ে যাতায়াত করেছি। কোনওদিন ভূতের দেখা তো পাইনি। এ সব নিছকই রটনা।’ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল কুম্ভকার বললেন, ‘যে প্রথম ভূত দেখার দাবি করেছিল, সে এই স্কুলের সামনেই খাবার বিক্রি করে। তবে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। আমরাও এমন গল্প কোনওদিন শুনিনি।’

    ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতোর বক্তব্য, ‘আমরা আট জন সারা রাত ওখানে ছিলাম, কিন্তু কিছুই চোখে পড়ল না। তেঁতুলগাছের নীচে বসেই তো খাওয়া–দাওয়া করলাম। কোনও ভূত আসেনি। পুরোটাই রটনা।’ সহকর্মী বিভীষণ মাহাতোর বক্তব্য, ‘অভিজ্ঞতা বলতে, রাতে একটি গাড়ি জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে পার হয়ে গেল, আর একটি ইউটিউব চ্যানেলের কিছু লোকজন এসেছিল ভূত রয়েছে, তার ছবি তুলতে। আমরা রুখে দাঁড়াতেই ওরা চলে যায়।’

    পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় কয়েক বছর আগে বেগুনকোদর স্টেশনে রাত জেগেছিলেন ভূত খুঁজতে। তিনি বললেন, ‘রাতভর জঙ্গলে জেগে তার দেখা মিলল না! সবটাই বুজরুকি। আমরা বলেছি, ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারলে পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবো। আশা করি এ বার লোকের ভয় কাটবে।’

  • Link to this news (এই সময়)