• পুলিশ স্টেশনে বসে জাল শংসাপত্র, গ্রেপ্তার সিভিক
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, মালবাজার: সর্ষের মধ্যে ভূত! না, সর্ষে খেতটাই ভূতের দখলে!জলপাইগুড়ির মালবাজার থানার ঘটনাটা শুনলে এই প্রশ্নটা উঠতে বাধ্য। একেবারে থানায় বসেই পুলিশের নাম করে ভুয়ো শংসাপত্র তৈরির কারবার চালানোর অভিযোগে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের জরুরি প্রয়োজনে পুলিশের শংসাপত্র প্রয়োজন হতো, টাকার বিনিময়ে তাঁদের এই ভুয়ো শংসাপত্র দেওয়া হতো। থানার অফিসারের স্বাক্ষর থেকে শুরু করে সিল পর্যন্ত সবকিছুই জাল করা হয়েছিল এই কারবার চালাতে।

    এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে ওই সিভিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম মনিরুল ইসলাম। রবিবার তঁাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

    বিভিন্ন রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি, সেনাবাহিনী বা কেন্দ্রীয় বাহিনীতে নিয়োগ বা অন্য প্রয়োজনে পুলিশ ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট বা পিসিসি দেওয়া পুলিশের রোজকার কাজের মধ্যেই পড়ে।

    সেজন্য আবেদনকারী সম্পর্কে বিভিন্ন স্তরে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে কোথাও কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না অথবা কোনও অপরাধমূলক কাজে তাঁর নাম জড়িয়েছে কি না ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা আধিকারিক বা থানার ওসি-আইসিরা এই শংসাপত্রে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তী সময়ে এক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়। অনলাইনে আবেদন জমা হওয়ার পরে পুলিশ সব খতিয়ে দেখে অনলাইনেই পিসিসি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট সাইটে ঢুকে সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট নিতে হয়।

    পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম থানায় বসেই অফলাইন ও অনলাইনে ভুয়ো সাইট তৈরি করে জাল শংসাপত্র ইস্যু করতেন টাকার বিনিময়ে। আবেদনকারীকে বলা হতো, স্বাভাবিক নিয়মে পিসিসি পেতে সময় লাগবে। তিনি অনেক তাড়াতাড়ি এই শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। অনেকেই সেই ফাঁদে পা দিয়ে টাকা দিতেন অভিযুক্তকে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মালবাজার থানায় বসেই ভুয়ো শংসাপত্রের কারবার ফেঁদে বসেছিলেন মনিরুল।

    সূত্রের খবর, রবিবার বিকেলে এই রকম শংসাপত্র পাওয়া কয়েকজন যুবক থানায় এসেছিলেন ঠিকানা পরিবর্তনের আর্জি নিয়ে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে বিষয়টি জানালে তাঁরা দেখেন, ওই শংসাপত্রগুলি জাল। সেগুলি কোথা থেকে আবেদনকারীরা পেয়েছেন, তা জিজ্ঞাসা করতেই মনিরুলের নাম উঠে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের বাড়ি মালবাজার থানার কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতে। গত প্রায় দু'-তিন বছর ধরে তিনি এই কারবার চালাচ্ছিলেন। আপাতত ২২টি জাল শংসাপত্র তিনি তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে দাবি পুলিশের। তবে এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

    জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খন্ডবহলে বলেন, 'এই ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। কতদিন ধরে কী ভাবে এই কারবার চলছিল, এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, তা জানতে অভিযুক্তকে জেরা করা হচ্ছে।' প্রাথমিক ভাবে পুলিশের দাবি, এক একটি ভুয়ো শংসাপত্রের জন্য এক-দু'হাজার টাকা করে নিতেন মণিরুল। এই ধরনের ঘটনায় সরকারের সম্মানহানি হয় বলে জানিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বুলু চিকবরাইক বলেন, 'সাধারণ চা শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের এ ভাবে প্রতারণা মেনে নেওয়া যায় না।'

  • Link to this news (এই সময়)