সমীর মণ্ডল, শালবনি
আবার সেই শালবনি। আবার এক নতুন প্রকল্পের শিলান্যাস। আবার প্রশিক্ষণ। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছে শালবনি।
সোমবার শালবনিতে জিন্দাল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস হল। ১৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে উঠবে ৮০০ মেগাওয়াটের দু’টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। জিন্দালদের দাবি, এখানে কাজ পাবেন কয়েক হাজার যুবক-যুবতী। খোলা হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে এলাকার যুবক-যুবতীরা প্রশিক্ষণ নেবেন।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপশি গড়ে উঠবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এ দিন জেএসডব্লিউ সংস্থার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল বলেন, ‘এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাবতীয় সরঞ্জাম আনা হবে জাপান থেকে। স্থানীয় ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষিত করার জন্য একটা ট্রেনিং সেন্টার খোলা হবে। যেখানে তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁরা পাওয়ার প্লান্টে কাজ করার সুবিধা পাবেন।’ মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কাজ পাবেন।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দালের কথায় মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন নিয়েও নতুন করে আশার আলো দেখছেন এলাকার মানুষজন।
স্থানীয় বাসিন্দা, জিন্দালদের প্রকল্পে জমিদাতা অদিত্য মাহাত, বিমল চালকরা বলেন, ‘আমরা বাম আমলে জমি দেওয়ার পর থেকে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। ইস্পাত প্রকল্প থেকে এবং জিন্দাল গোষ্ঠীর রঙের কারখানা। কিছুই হয়নি। এ দিনও গিয়ে সব শুনলাম অনেক কিছু। মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন জাগছে। এর আগেও এলাকার প্রায় চারশো জন যুবক-যুবতী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাঁদের কয়েকজন কাজ পেয়েছেন। তবে শ্রমিকের। কেউ কম্পিটার প্রশিক্ষণ নিয়ে গাছে জল দিচ্ছেন। কেউ হাসপাতালের টেকনিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাস্তা ঝাঁট দিচ্ছেন। আবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, আবার হতাশ হতে হবে, তা আমরা চাইনা। আমরা চাই, শিল্প হোক। মানুষের কর্মসংস্থান হোক।’
স্থানীয় জমিদাতা সংগঠনের নেতা পরিষ্কার মাহাত বলেন, ‘এ দিন শিলান্যাস অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। গল্পের মতো অনেক কিছু শুনে এলাম। শুনে তেমন কিছু আশার আলো আমি দেখতে পাচ্ছি না। শিল্প হলে ভালো। তবে বিশ্বাস করতে পারছি না।’ জমিদাতা–সহ এলাকার মানুষ চাইছেন, শিল্প হোক। শিল্প হলেই কিছু মানুষ কাজ পাবেন। এলাকার উন্নয়ন হবে। স্বপ্ন দেখিয়ে আবার যেন স্বপ্ন ভেঙে না দেন।
২০০৮ সালে ইস্পাত প্রকল্পের শিলান্যাসের পর ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিলেন এলাকার যুবক সুমন সাঁতরা। শালবনি জিন্দাল প্রকল্পের গেটের সামনে কুলফেনিতে বাড়ি। ৭২০০ টাকা বেতনে জিন্দালদের শালবনির হাসপাতালে কাজও করছিলেন। তারপর প্রকল্প বাতিল হতেই কর্মচ্যুত হতে হয় তাঁদের। হতাশ হয়ে কর্ণাটকে চলে যান পড়তে। সেখান থেকে পড়ে এসে এখন আসানসোলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। সুমন এ দিন বলেন, ‘আবার যেন প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের মতো হতাশ করে না দেওয়া হয়।’ মনের মধ্যে এমনই সব প্রশ্ন নিয়েও আশার আলো দেখছেন, পুতুল মাহাত, সম্রাট মান্না, বিশ্বজিৎ চালকরা। তাঁদের কথায়, ‘শিল্প হলে যদি কাজ জোটে! আশা তো করবই।’