সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আচমকা চাকরিহারা হওয়ার পর থেকে কেটেছে বহু নির্ঘুম রাত। ‘যোগ্যতা’র ভিত্তিতে পাওয়া শিক্ষকতার চাকরিতে হঠাৎ অনিশ্চয়তা। নিয়োগ দুর্নীতির জাঁতাকলে পড়ে যেন দুর্ভাগ্যতাড়িত হয়েছেন তাঁরা। ‘যোগ্য-অযোগ্যে’র ফারাক করতে অক্ষম স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপর ভরসা হারিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের নিয়োগ প্যানেল বাতিল করেছে। কর্মহীন রাজ্যের ২৫ হাজার ৭৫২ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। এসএসসি তবু ভরসা দিয়েছিল, কারা যোগ্য, কারাই বা অযোগ্য, তা তালিকা প্রকাশ করে পৃথকীকরণ করা হবে। তার দিনও ধার্য হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীও বারবার আশ্বাস দিয়েছেন, ‘যোগ্য’রা বঞ্চিত হবেন না, তাঁদের পাশে রয়েছে সরকার।
কিন্তু শুধু মৌখিক আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতিতে কাজ হল না, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে সোমবার। ‘যোগ্য-অযোগ্যে’র কোনও তালিকাই প্রকাশিত হয়নি। আর কথা দিয়ে কথা না রাখায় এসএসসি আর মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ভবনের সামনে রাতভর ধরনায় বসে রইলেন ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা। ভুখা পেটে সকালেও চলছে একরোখা প্রতিবাদ। তাঁদের ঘেরাওয়ের মাঝে পড়ে নিজেদের দপ্তরে ‘বন্দি’ এসএসসি এবং পর্ষদের আধিকারিকরাও। শোনা যাচ্ছে, সকালে ডিরোজিও ভবন ও আচার্য সদনে চা নিয়ে যেতেও বাধা দেওয়া হয়েছে প্রতিবাদীদের তরফে। যুক্তি একটাই, তাঁদের পেটের ভাত জোগানোর রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়েছে, অভুক্ত থেকে তাঁদের জ্বালা বুঝুন অপর পক্ষ।
কেন দিনক্ষণ জানানো সত্ত্বেও তালিকা প্রকাশ করল না এসএসসি? সোমবার সারাদিন চাকরিহারাদের অপেক্ষা করানোর পর এসএসসির তরফে কার্যত দায়সারাভাবে জানানো হয়েছে, আইনি বাধা রয়েছে, তালিকা প্রকাশের অনুমতি দিতে নারাজ আইন বিশেষজ্ঞরা। তাহলে উপায় কী? কমিশন, শিক্ষামন্ত্রী জানালেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘যোগ্য’রা বেতন পাবেন। তার মধ্যে হয়ে যাবে নতুন নিয়োগ। এখানেই প্রশ্ন, কারা বেতন পাবেন? ‘অযোগ্য’দেরও বেতন দেওয়া হবে না তো? উত্তর নেই কারও কাছেই। আর তাতেই ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। সোমবার রাতে আচার্য সদনের সামনে থেকেই নিজেদের দাবি জোরাল করে তাঁরা জানান, যোগ্য-অযোগ্য ফারাক করতেই হবে। নইলে তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভ চলবেই। এমনকী গুলি করলেও উঠবেন না। জীবনের এমন সংকট মুহূর্তে এতটা লড়াই-ই তো করবেন তাঁরা!
চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একসময়ে আন্দোলনের মাটি ছুঁয়ে আসা জুনিয়র চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে সোমবার রাতে সেখানে গিয়েছিলেন আর জি করের জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো। প্রতিবাদীদের জন্য বায়োটয়লেট-সহ আবশ্যিক কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার এই আন্দোলনের চিত্রটা ঠিক কী দাঁড়ায়, সেদিকে নজর থাকবে সব মহলের।