• অনেক শিক্ষকই গরহাজির স্কুলে, একদল নিলেন ক্লাস
    এই সময় | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: চাকরিহারা শিক্ষকদের স্কুলে উপস্থিতি নিয়ে ভিন্ন ছবি দেখা দিল জেলায় জেলায়। এক দিকে দেখা যাচ্ছে, সোমবার স্কুল খোলার আগে ‘যোগ্য–অযোগ্য’দের তালিকা না পৌঁছনোয় সিংহভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই স্কুলবিমুখ রইলেন। অনেকেই আবার কলকাতায় গিয়ে এসএসসি ভবন অভিযানে সামিল হন। সেখানে অবস্থানে বসেন। অন্য দিকে, চাকরিহারা শিক্ষকদের একটা অংশ এ দিন হাজির ছিলেন স্কুলে। নিয়েছেন ক্লাসও।

    এ দিন বর্ধমানের বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় দিলেন। জানা গিয়েছে, কমবেশি সমস্ত স্কুলেই চাকরিহারা শিক্ষকদের একটা বড় অংশের হাজিরা ছিল। তাঁরা ক্লাসও নিয়েছেন নিয়ম করে। বিজ্ঞানের এক শিক্ষিকা অনিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সহকর্মীরা এসএসসি ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন। আর আমাদের অবস্থাটা না মরে বেঁচে থাকার মতো হয়ে আছে। স্কুলে যাচ্ছি, অনেকটা সেই যেতে হবে বলেই।’ পূর্ব বর্ধমান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবব্রত রায় বলেন, ‘অনেক প্রধান শিক্ষকই জানিয়েছেন শিক্ষকরা স্কুলে এসেছেন। কাউকে স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়নি।’

    চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম আছে কাটোয়ার একাধিক স্কুলেরও। সোমবার কাটোয়ার পানুহাট রাজমহিষী স্কুলে চাকরি বাতিলের তালিকায় থাকা একজনও হাজির ছিলেন না। একই ছবি কাটোয়া কাশিরামদাস বিদ্যায়তনেরও, জানালেন প্রধান শিক্ষক অমলকান্তি দাস। কাটোয়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে এ দিন একজন মাত্র হাজির হয়েছিলেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক সুবীর মণ্ডল। ও দিকে, কালনা মায়াসুন্দরী হাই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক চন্দন ঘোষ রয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষকের তালিকায়। সোমবার তিনি বলেন, ‘আজ স্কুলে যাইনি। যোগ্য–অযোগ্যদের তালিকা বের হওয়ার পর তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব স্কুলে যাব কি না।’

    এ দিনও দুর্গাপুরের জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যালয়ে চাকরি হারানো শিক্ষকরা ক্লাসে এসেছেন ও হাজিরার খাতায় সই করেছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জইনূল হক বলেন, ‘আমাদের স্কুলে দু’জন শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা নিয়মিত স্কুলে এসে ক্লাস করাচ্ছেন। কিন্তু সই করছিলেন না। ১৭ এপ্রিল আদালতের নির্দেশের পর তাঁরা হাজিরার খাতায় সই করছেন। নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন।’ দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন রাইরানি গালর্স স্কুলের তিন জন শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। আদালতের নির্দেশের পর তাঁরা ফের স্কুলে আসছেন।

    রানিগঞ্জের একটি স্কুলে ১২ জনের চাকরি গিয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শনিবার একজন স্কুলে এসেছিলেন। সোমবার কেউ আসেননি। আবার আসানসোলের মহিলা কল্যাণ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর স্কুলে চাকরিহারা দু’জন শিক্ষিকা স্কুলে আসছেন। বারাবনির দোমোহনি কেলেজোড়া হাই স্কুলের কোনও চাকরিহারা শিক্ষক স্কুলে আসছেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মৃণালজ্যোতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শকের লিখিত নির্দেশ না পাওয়ায় স্যালারি পোর্টালে তথ্য জমা করতে পারছেন না। ফলে সঠিক সময়ে বেতন পেতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

    পুরুলিয়ায় হাতে গোনা দু’একটি স্কুল বাদে অন্য স্কুলগুলিতে হাজিরা দেননি কোনও চাকরিহারা শিক্ষক। মানবাজারের স্বপন সুব্রত হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নীলোত্পল দত্ত বলেন, ‘তিন জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তাঁরা কেউ এ দিন স্কুলে যোগ দেননি।’ বরাবাজারে বদলডি হাই স্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘যোগ্য শিক্ষক–শিক্ষিকাদের পাশাপাশি যোগ্য শিক্ষাকর্মীদের জন্যও যেন এসএসসি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাঁদের স্কুলে ফেরানোর ব্যবস্থা নেয়। কারণ, স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক–শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা একে অপরের পরিপূরক।’ শাঁকড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিষেক মিশ্র বলেন, ‘আমাদের স্কুলের তিন জন শিক্ষক এই রায়ের আওতায় পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন শিক্ষক আজ স্কুলে এসেছিলেন।’

    বাঁকুড়ায় চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অধিকাংশই স্কুলে যাননি সোমবার। এ দিন তাঁদের মধ্যে অনেকেই কলকাতায় গিয়ে এসএসসি ভবন অভিযানে সামিল হন। ওই কর্মসূচিতে সামিল হওয়া বাঁকুড়ার ওন্দার পাত্রহাটি রামরতন হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা দুয়ারি বলেন, ‘এসএসসি নানা ভাবে আমাদের আন্দোলনকে ভাঙার চেষ্টা করছে। আমাদের দাবি, কারা যোগ্য কারা অযোগ্য তার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হচ্ছে এসএসসি ভবনের সামনেই আমাদের অবস্থান বিক্ষোভ চলবে।’

  • Link to this news (এই সময়)