সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
আশায় বুক বাঁধছিলেন প্রধান শিক্ষকেরা। শনিবার না এলেও সোমবার নিশ্চয় স্কুলে আসবেন সুপ্রিম নির্দেশে চাকরি যাওয়া শিক্ষকেরা। কারণ, আদালতই যোগ্য শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নেই বলে জানিয়েছিল। তবু এ দিন বেশিরভাগ স্কুলেই দেখা গেল, একজন শিক্ষকও গেলেন না। কোনও কোনও স্কুলে অবশ্য দু’একজন শিক্ষক গিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে হতাশ প্রধান শিক্ষকেরা। কী ভাবে স্কুলে পঠন-পাঠন চালাবেন, কী ভাবে পরীক্ষার খাতা দেখবেন, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না। যতদিন না স্থায়ী সমাধানসূত্র মিলছে ততদিন তাঁরা স্কুলে যাবেন না বলে শনিবারই ঘোষণা করেছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, আন্দোলনে থাকবেন এবং আইনি পরামর্শ নেবেন। অন্য দিকে, সম্প্রতি চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস দিয়েছিলেন, এ দিনই যোগ্য–অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল সরকারের। কিন্তু এ দিন কোনও স্কুলেই সেই তালিকা পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষকেরা। সেই তালিকার দিকে তাকিয়েছিলেন অনেক চাকরিহারা শিক্ষক।
এ দিন বিকেল পর্যন্ত সেই তালিকা না বেরনোয় কেউ আর স্কুলমুখো হননি বলেই ওয়াকিবহাল অংশ মনে করছে। নারায়ণগড় ভদ্রকালী গান্ধী বিদ্যাপীঠের পাঁচ শিক্ষক এবং এক অশিক্ষক কর্মীর চাকরি গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরন্ময় মান্না এ দিন জানান, ‘শনিবারও কোনও শিক্ষক স্কুলে আসেননি। ভেবেছিলাম সোমবার হয়তো আসতে পারেন। কিন্তু এ দিনও একজনও আসেননি।’
ওই স্কুলেরই চাকরিহারা শিক্ষক অভিজিৎ গিরি বলেন, ‘স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে যাব না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সঙ্গে আইনি পরামর্শও। দেখি সরকার যোগ্য, অযোগ্যদের তালিকা দেয় কিনা। তা দেখে যদি পজ়িটিভ কিছু মনে হয়, তা হলে স্কুলে যেতে পারি।’ নারায়ণগড়ের শশিন্দা সাগরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে আটজনের চাকরি গিয়েছে। স্কুলের পঠনপাঠন চালানোর দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। কেউ এ দিন স্স্কুকুলে আসেননি।
প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর তিওয়ারি বলেন, ‘কেউ স্কুলে না এলে আমাদের তো কিছুই করার নেই।’ একই অবস্থা দাঁতনের তররুই শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের। এই স্কুলের ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে পাঁচজনের চাকরি যাওয়ায় মাত্র ছ’জন শিক্ষক রয়েছেন। কী ভাবে ক্লাস হবে স্কুলে? প্রধান শিক্ষক অলোকরঞ্জন প্রধান, ‘ভয়ঙ্কর সমস্যা। ওই পাঁচ জন শিক্ষকের একজনও স্কুলে আসেননি।’ এই স্কুলের চাকরিহারা একমাত্র ইংরেজির শিক্ষক বিশ্বেশ্বর দাস বলেন, ‘দেখি, শিক্ষা দপ্তর আমাদের মতো যোগ্য শিক্ষকদের জন্য কী করছে। তার পরেই স্কুলে যাব।’ যা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে, স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে আন্দোলনের পথেই এগোতে চাইছেন সকলে।