• বিদ্যাসাগরের ‘উত্তরসূরি’ মুখ্যমন্ত্রী, ফেস্টুনে বিতর্ক
    আনন্দবাজার | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তৃণমূলের দেওয়া ফেস্টুনে লেখা ‘বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী (বানান অপরিবর্তিত) নারী শিক্ষার অগ্রদূত স্বাগতম’। বিরোধীরা তো বটেই, বিদ্যাসাগরের পরিবারের সদস্যও তাতে আপত্তি তুলেছেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, কাজের দৌলতেই মুখ্যমন্ত্রীর এ সব বিশেষণ প্রাপ্য।

    সোমবারই দু’দিনের সফরে মেদিনীপুরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে স্বাগত জানাতে তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা যে ফেস্টুন দিয়েছে, সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী’ লেখা হয়েছে। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও ভাবধারা অনুসরণকারীদের উত্তরসূরি বলা যায় জানিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিবারের সদস্য প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘এখানে মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তরসূরি বলা হচ্ছে। তিনি কী ধরনের উত্তরসূরি? যেখানে স্কুল থেকেই পছন্দের যুবককে নিয়ে নাবালিকারা চম্পট দিচ্ছে, মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে কী ভাবে উত্তরসূরি বলা যায়!”

    বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামের যুবক কুণাল সিংহরায়ের কথায়, ‘‘কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প মেয়েদের স্কুলমুখী করেছে, এটা ঠিক। তবে নাবালিকা বিয়ে আটকানো যাচ্ছে না। নাবালিকারা মা হচ্ছে। বিদ্যাসাগর এটাই চাননি।” গ্রামের অন্য এক যুবক নিমাই ঘোষের অবশ্য দাবি, “উত্তরসূরি বলে ভুল হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই গ্রামে এত উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে।”

    তৃণমূলও ওই শব্দবন্ধ প্রয়োগে ভুল দেখছে না। উল্টে তারা দাবি করছে, বাম আমলে সিপিএম নেতা বিমান বসুকে বিদ্যাসাগরের ‘ভাবশিষ্য’ হিসেবে তুলে ধরা হত। বীরসিংহের বাসিন্দা, তৃণমূলের বুথ সভাপতি সুব্রত ঘোষ বলছিলেন, ‘‘বীরসিংহ গ্রামও আজ অনেক উন্নত। বাম আমলে গ্রাম পিছিয়ে ছিল।” পক্ষান্তরে, ঘাটালের সিপিএম নেতা উত্তম মণ্ডল বলছেন যে, “গ্রামের মানুষকে সাক্ষর করে তোলার প্রয়াস, বই পড়ানোর অভ্যাস বামেদের হাত ধরেই হয়েছিল। ভাবশিষ্য এবং উত্তরসূরির ফারাক যাঁরা জানেন না, তাঁদের কী জবাব দেব!”

    অন্য দিকে, তাঁকে কেউ ‘বিদ্যাসাগরের ভাবশিষ্য’ বলেননি বলেই দাবি করছেন বিমান বসু। প্রবীণ এই বাম নেতার মতে, ‘‘বিদ্যাসাগরের চেতনা কেউ প্রসার করতে চাইলে, অন্যায় কিছু নেই। আমরাও বিদ্যাসাগরের ভাবনা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। তাই বলে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তুলনীয় কেউ হতেই পারেন না।’’

    এই প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাণীরঞ্জন দে বলছেন, ‘‘বিদ্যাসাগর সবই করেছিলেন ব্যক্তিগত প্রয়াসে। যাঁকে উত্তরসূরি বলা হচ্ছে, তিনি প্রশাসনের প্রধান। যা হচ্ছে, সেটা সমষ্টিগত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ফল।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)