• ব‍্যক্তি মমতার ‘ক‍্যারিশমা’ যে কোনও রাজনীতিকের ঈর্ষার কারণ হতে পারে! কলকাতায় বলে গেলেন কংগ্রেসি শশী
    আনন্দবাজার | ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • গাড়ি ছুটল লেক গার্ডেন্স থেকে নিউ আলিপুর। স্টপ ওয়াচ চালু হল। যা যা প্রশ্ন, যাত্রাপথেই সব কিছুর উত্তর দেবেন রাজনীতিক ও লেখক শশী তারুর। কলকাতায় এসেছিলেন ‘দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন’-এর আমন্ত্রণে। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘এইট্টিন আন্ডার এইট্টিন’-এর মঞ্চে নিজের লেখা বই, তাঁর জীবন, এ প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের দেখে মুগ্ধতা— নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। শহরের রাজপথ ধরে গাড়ি ছুটতে শুরু করার পরে কথা গড়াল দেশ-দশ-রাজনীতি নিয়ে। পথের বাঁকে মাঝেমধ্যে কথা ঘুরল, আবার ফিরে এল তাঁর ঘর কংগ্রেসে। তবে সব প্রশ্নের উত্তর এল না। মাঝেমাঝে থামলেন, হাসলেন, প্রশ্নের মাঝে থামালেন। আর সে সবের সঙ্গে তাঁর ‘ভারতত্ত্বে’ বিজেপি-কংগ্রেস কখনও মিলল। কখনও থমকাল।

    আনন্দবাজার ডট কম: দেশের হাল নিয়ে কথা হয় সর্বত্র। উন্নয়নের কথা ফিরে ফিরে আসে। আপনার কী মনে হয়, কী করলে উন্নতি হবে দেশের?

    শশী তারুর: সকলকে নিয়ে চলাই একমাত্র মন্ত্র। আমাদের দেশ বহুত্বের দেশ। তাঁদের সকলকে নিয়ে চলতে হবে, কোনও না কোনও ভাবে আমাদের ইতিহাসে যাঁদের অবদান আছে। আমার মনে হয়, আমরা যদি সকলকে কাছে টেনে নিয়ে চলতে পারি, তা হলেই আসল উন্নয়ন সম্ভব। যে যে সংস্কৃতির মিশেলে এ দেশ তৈরি হয়েছে, আমার মনে হয়, তাদের সকলের এ দেশে সম্মান ও সুযোগ পাওয়া দরকার।

    প্রশ্ন: সকলকে নিয়ে চলার পথ কী হওয়া উচিত?

    উত্তর: খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের সংবিধানে যে বহুস্বরের স্বীকৃতি আছে, তা এখন মেনে চলার চেষ্টা করছে বিজেপিও। আগের থেকে সুর নরম করেছে। এখন আর তেমন কড়া ‘হিন্দুরাষ্ট্র’-এর কথা বলছে না কিন্তু। খেয়াল করে দেখবেন, মোহন ভাগবতের মতো এখনও যাঁরা হিন্দুরাষ্ট্রের স্লোগান ব্যবহার করেন, তাঁরা কিন্তু বলছেন যে, হিন্দুরাষ্ট্র মুসলমান বা খ্রিস্টানদের বাদ দিয়ে নয়।

    প্রশ্ন: কংগ্রেসের ভূমিকার কথা বলবেন না?

    উত্তর: কংগ্রেস তো সব সময়ে এ কাজই করে এসেছে! বরাবর কংগ্রেস বলেছে এ দেশে বহুত্বের। নানা স্বর যেন শোনা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এর মধ্যেও রাহুল গান্ধী সে কথা মনে করিয়েছেন এক সভায়। সঙ্গে বলেছেন, আমাদের দেশে মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের নানা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।

    প্রশ্ন: তবে কি দেশের নেতারা আসলে সকলকে নিয়ে চলতে পারছেন না?

    উত্তর: এর সমাধান নেতৃত্বে নয়, সাধারণের মধ্যে লুকিয়ে আছে। সাধারণ মানুষ, তৃণমূল স্তরের মানুষের ক্ষমতায়ন যতটা হবে, তারা যত একে অপরের প্রতি সহিষ্ণু হবে, ততই সকলকে নিয়ে চলতে পারবে। নেতারা আর কতই বা বলবেন? আমি তো গত ৩০ বছর ধরে এই কথা বলে আসছি। একের পর এক বই লিখেছি। এক দিক থেকে দেখতে গেলে, আমার আর প্রায় নতুন কিছুই বলার নেই এ নিয়ে। তবু এখনও পরিস্থিতি বদলায়নি সে ভাবে। তাই বলে যেতে হবে।

    প্রশ্ন: এ বার তবে কারা বলবেন?

    উত্তর: আসলে যুবসমাজকে টানতে হবে রাজনীতির দিকে। কমবয়সিরা অনেকে এখন ভোট দিতেও চায় না। রাজনীতির বাকি সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে তো চায়ই না। জানি, জীবন অনেকটা বদলে গিয়েছে। আরও বহু জিনিস নিয়ে ভাববার আছে। গোটা সময়টা রাজনীতিতে দিতে চাওয়া হয়তো সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে, ৫১ শতাংশ ভোটার আমাদের দেশে এখন ৩৫ বছর বয়সের নীচে। ১৮ বয়সের উপর ঠিক কত সংখ্যক আছে, সেই হিসাবটা এখনই আমার কাছে নেই। কিন্তু সংখ্যাটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যাচ্ছে। যুবসমাজকে জানতে হবে, তাদের করের টাকা কোথায় যাচ্ছে। তাদের হয়ে যাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁরা কেমন, সে কথা ভাবতে হবে। যদি এ সবের থেকে দূরে সরতে থাকে তারা, তবে ভারসাম্য নষ্ট হতে বাধ্য। আর এ সব নিয়ে যদি মাথা ঘামাতে শুরু করে, উল্টো দিক থেকে দেখলে, তবে সকলকে নিয়ে চলার ইচ্ছা তৈরি হওয়াও কঠিন নয়।

    প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় দেশের সাংস্কৃতিক ভাবনা, বহুত্ব বিষয়ে সচেতন ব্যক্তিরা নেতৃত্বে বেশি করে এলে এই দূরত্ব ঘুচতে পারে?

    উত্তর: নেতারা নন, সাধারণ মানুষই পারবে। আসলে সাধারণ মানুষকেই পারতে হবে।

    প্রশ্ন: কলকাতায় এসেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না?

    উত্তর: অবশ্যই তিনি খুব সফল জননেত্রী। আমার মনে হয়, এখনও পশ্চিমবঙ্গে তিনিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। জনতার সঙ্গে যোগাযোগে থাকার ওঁর একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে। নিজস্ব ‘ক্যারিশমা’ আছে। যে কোনও রাজনীতিকের ঈর্ষার কারণ হতে পারে সেটি। আমাদের দলের সঙ্গে তাঁর দলের মতাদর্শে অনেক ক্ষেত্রে ফারাক আছে, তবে আপনি প্রশ্নটা করেছেন ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। ফলে আমি তাঁকে নিয়ে এ কথা বলবই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)