• ফের হাতছাড়া ভূস্বর্গ? পর্যটকদের উপর ভয়াল হামলা, মাথায় হাত কলকাতার পর্যটন সংস্থাগুলির
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • কলকাতার ভ্যাপসা গরমের হাত ছাড়িয়ে কাশ্মীরের সৌন্দর্য উপভোগের এটাই তো মোক্ষম সময়। গোটা দেশের সঙ্গে বর্তমানে বঙ্গবাসীরও পছন্দের ট্যুর ডেস্টিনেশন ‘ভূস্বর্গ’। গত কয়েক বছরে গ্রীষ্ম হোক কী পুজোর ছুটি, হনিমুন থেকে প্রি-ওয়েডিং শুট... সবেতেই বাঙালির পা পড়েছে কাশ্মীরে। কিন্তু মঙ্গলবার ফের ভূস্বর্গে ফিরল আতঙ্ক। মৃত্যুপুরী ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ পহেলগাঁও। নজিরবিহীন ভাবে জঙ্গিরা হামলা চালাল নিরীহ পর্যটকদের উপর। জঙ্গিদের এলোপাথারি গুলিতে নিথর লাশ হয়ে গেলেন ৩২ জন। সেই তালিকায় আছেন দুই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিও।

    জঙ্গি হামলা কাশ্মীরে নতুন নয়। গত শতাব্দীর নয়ের দশক থেকে বারবার জঙ্গিরা নিশানা করেছে পর্যটকদের। শ্রীনগরে পর্যটকদের বাসে গ্রেনেড ছোড়া থেকে অমরনাথ যাত্রায় ভয়াবহ হামলা... বারবার কাঁপন ধরিয়েছে পর্যটকদের বুকে। কিন্তু এদিন পহেলগাঁও-এর হামলার নৃশংসতা ছাড়িয়ে গিয়েছে অতীতের সব ঘটনাকে। ঘুরতে আসা পর্যটকদের ধর্ম পরিচয় জিজ্ঞেস করে, রিসর্টে ঢুকে নাম-পরিচয় জেনে, বেছে বেছে গুলি করার নজির আর নেই। কাজেই ফের নতুন করে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

    এ দিনের ঘটনায় আসন্ন কাশ্মীর ট্যুরগুলি নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কলকাতার পর্যটন সংস্থাগুলির কর্ণধারদের কপালে। বর্তমানে তাঁদের মাধ্যমে যে সমস্ত পর্যটক কাশ্মীরে গিয়েছেন, তাঁদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানো নিয়েও উদ্বিগ্ন তাঁরা। এই সময় অনলাইন-এর কাছে তাঁদের সেই উদ্বেগ তুলে ধরেছেন শহরের জনপ্রিয় পর্যটন সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা।

    কলকাতার এক পর্যটন সংস্থার কর্ণধার, নন্দিনী সেন এই সময় অনলাইন-কে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের বেশ কয়েকজন অতিথি পহেলগাঁওয়ে আছেন। তাঁদের আগামিকাল শ্রীনগর পৌঁছে ফ্লাইট ধরার কথা। তাঁরা কী ভাবে ফিরবেন এখনও বুঝতে পারছি না। রাস্তার কী পরিস্থিতি থাকবে, নিরাপত্তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।’

    নন্দিনী আরও জানিয়েছেন, মে ও সেপ্টেম্বরেও বেশ কয়েকটি বড় গ্রুপ নিয়ে কাশ্মীর যাওয়ার কথা তাঁদের। ট্যুর ডেস্টিনেশনগুলির মধ্যে পহেলগাঁও-এর নামও আছে। কিন্তু এ দিনের হামলার পর পর্যটকদের সেখানে নিয়ে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় তিনি। নন্দিনী বলেছেন, ‘মঙ্গলবার যা ঘটল, তাতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আমাদের মতো মানুষদের স্বার্থও ঘা খাবে। আমরা গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।’

    এ দিন অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে কলকাতার এক জনপ্রিয় ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়া এক দল বাঙালি পর্যটক। এই সময় অনলাইন-কে সেই প্রসিদ্ধ ভ্রমণ সংস্থাটির চিফ ম্যানেজার, আশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালেই ৪২ জন পর্যটকের ওই দলটি পহেলগাঁও থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই এই ভয়ঙ্কর হামলা হয়। ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আশিসও।

    তিনি বলেছেন, ‘প্রথমে ওখানকার ঘোড়া চড়ানোর ব্যবসা রয়েছে এমন এক পরিচিত ব্যক্তি আমায় খবরটা দেন। তার পর একে একে হোটেল মালিক, গাড়িওয়ালাদের ফোন আসছে। সবাই কান্নাকাটি করছেন। নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ক্ষতির বিষয়ও জড়িয়ে রয়েছে। এই রকম চললে তো ফের পর্যটকেরা মুখ ফেরাবেন। এপ্রিল ও মে মাসে আমাদের পরপর ট্যুর রয়েছে কাশ্মীরে। প্রতিটি দলেই অন্তত ৪০ জন করে পর্যটক রয়েছেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরাও শঙ্কায়। তবে এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, পর্যটন ব্যবসা লাটে উঠবে।’

    কয়েক দশক ধরে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বামাপদ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলাতেও শোনা গিয়েছে একই সুর। তিনি বলেন, ‘কয়েক দশক ধরেই আমরা কাশ্মীরে পর্যটকদের পাঠাচ্ছি। কিন্তু এই রকম মর্মান্তিক ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। ধর্ম পরিচয় জেনে গুলি করে মারা। এ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের সৌভাগ্য, মাত্র তিন দিন আগেই আমাদের তত্ত্বাধানে যাওয়া ৫০ জন পর্যটকের একটি দল কলকাতায় ফিরেছেন। দলটি পহেলগাঁওয়েও দু’দিন ছিল।’

    এই ঘটনায় পর্যটন ব্যবসার অকল্পনীয় ক্ষতি হল বলে মত বামাপদর। তিনি বলেছেন, ‘এই গ্রীষ্মেও আমাদের অফবিট কাশ্মীরে ভ্রমণ সূচি আছে। এই ঘটনার খবর পেয়েই বেশ কয়েকজন আমায় ফোন করেছেন। তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত। কাশ্মীরে গত কয়েক বছরে পর্যটন ব্যবসার যে উন্নয়ন হয়েছিল তার খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমাদেরকেও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

    স্বাভাবিক ভাবে এই ঘটনায় সবথেকে আতঙ্কে ভূস্বর্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল ভূস্বর্গে। ফুলে ফেঁপে উঠছিল তাঁদের ব্যবসা। কেউ হোটেল মালিক, কারও গাড়ির ব্যবসা, কেউ ঘোড়া চালান, কেউ হাউসবোটের মালিক, কেউ বা শালের ব্যবসা করেন। মঙ্গলবারের পর ফের পর্যটন ব্যবসায় ভাঁটার টান পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

  • Link to this news (এই সময়)