• সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব থেকে হৃদয় আদানপ্রদান, চার হাত এক হল মূক ও বধির দীপ-অনামিকার
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দু’জনেই জন্ম থেকে মূক ও বধির। সেই অর্থে তাঁদের কারও বন্ধু ছিল না। নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে দিন কাটত। সঙ্গে ভবিষ্যৎ ঘিরে ঘোর অনিশ্চয়তা। কিন্তু বছর খানেক আগে আচমকা বদলে যায় তাঁদের জীবন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব হয় দীপ ও অনামিকার। দমবন্ধ জীবনে যেন দোলা দেয় একমুঠো সজীব বাতাস। বন্ধুত্ব গাঢ় হতেই মন দেওয়া নেওয়া। অবশেষে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন দীপ ও অনামিকা। তাঁদের চার হাত এক করতে এগিয়ে এলেন পরিবার থেকে পাড়া প্রতিবেশী। প্রতিকূল জীবনে চলার পথে জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়ে যারপরনাই খুশি ওই যুগল।

    সোমবার রাতে ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারের ভাঙামালি গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানের মঞ্চে সারাজীবন একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখার শপথ নেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই দু’জন খুঁজে পেয়েছেন দু’জনকে। ফলে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের বিয়ের ছবি পোস্ট না করলে হয়! আর তাই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে মঙ্গলবার সকালেই ছাদনাতলায় মালাবদল থেকে সিঁদুর দানের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন অনামিকা। নতুন দম্পতিকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। কেউ কেউ আবার কমেন্টে লিখেছেন মধুরেণ সমাপয়েৎ!

    ধূপগুড়ির বাসিন্দা ২২ বছরের দীপ রায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। যখন যেমন কাজ পান, সেটাই করেন। বেশকিছু দিন পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেছেন। বর্তমানে ধূপগুড়ি স্টেশনে পণ্য ওঠা-নামানোর কাজ করছেন। অন্যদিকে, দিনমজুর শ্যামল রায়ের মেয়ে ১৯ বছরের অনামিকা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অনামিকার দাদা কল্যাণ রায় বলেন, জন্ম থেকেই বোন কথা বলতে পারে না। কানেও শোনে না। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বোন নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছে, বাড়িতে এটা জানাতেই আমরা আর আপত্তি করিনি। সোমবার রাতে আমাদের বাড়িতেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। পাত্রপক্ষও হাজির ছিল। আমাদের যেমন সামর্থ্য, সেইমতো বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওরা ভালো থাকুক, এটাই চাই।

    অনামিকার প্রতিবেশী পার্থসারথী রায় বলেন, যতদূর জানতে পেরেছি, বছর খানেক ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওদের পরিচয়। সেখান থেকেই একে অপরের জীবনসঙ্গী হওয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় ওরা। দু’তরফেই রাজি থাকায় বিয়ের কথা হয়। পাত্রের বাবা জগৎ রায় ট্রেনে হকারি করেন। পাত্রীর বাবা শ্যামল রায় অন্যের জমিতে দিনমজুর খাটেন। অভাবের মধ্যে দিয়েই দিন চলে দু’তরফের। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে আন্তরিকতার এতটুকুও অভাব ছিল না। নতুন দম্পতি সুখে থাকুক, আমরা সবাই এটাই চাই।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)