• মুখ থুবড়ে পড়েছে সাফাই কর আদায়, কাউন্সিলারদের উপর ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যান
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: তহবিলের ঘাটতি মেটাতে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ‘সাফাই কর’ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরুলিয়া পুরসভা। কিন্তু, শুরুর পরই সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। চরম অর্থসঙ্কটে পুরসভা সাফাইকর্মীদের বেতনও দিতে পারছে না। কর সংগ্রহ না হওয়ার দায় কাউন্সিলারদের দিকে ঠেলছেন চেয়ারম্যান। গত ডিসেম্বরে সাফাইকর্মীদের ধর্মঘটের সময়ই চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য পুরসভা মাসে ৩০টাকা করে নেবে। শহরে প্রায় ৩০হাজারের বেশি বাড়ি রয়েছে। সমস্ত দোকান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ৩০-৫০টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেসময় চেয়ারম্যান দাবি করেছিলেন, এর ফলে পুরসভার অর্থসঙ্কট অনেকটাই কাটবে। পুরসভা সাফাইকর্মীদের ঠিকসময়ে বেতনও দিতে পারবে। কিন্তু পাঁচমাস 

    হতে চললেও ঠিকমতো টাকা আদায় হচ্ছে না।

    চেয়ারম্যান নব্যেন্দু মাহালি বলেন, যে পরিমাণ সাফাই কর আদায় হওয়ার কথা, তত টাকা আদায় হচ্ছে না। সাফাইকর্মীরা রোজ বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করছেন না। ফলে বাসিন্দারাও টাকা দিতে চাইছেন না। এনিয়ে কাউন্সিলারদের ভূমিকা নিয়েও চেয়ারম্যান প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, সাফাইকর্মীদের কাজকর্ম ও কর আদায়ের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব কাউন্সিলারদেরও রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ কাউন্সিলার দায়িত্ব পালন করছেন না। একটা ওয়ার্ডে কর সংগ্রহ হলেও পাশের ওয়ার্ডে হচ্ছে না। ফলে বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, ওপাড়ার লোকে টাকা না দিলে আমরা দেব কেন? এভাবে যাঁরা টাকা দিচ্ছিলেন, তাঁরাও দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন।

    যদিও তৃণমূল কাউন্সিলার বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, চেয়ারম্যান সব সিদ্ধন্ত একাই নেন। কারও সঙ্গে আলোচনা করেন না। পুরসভাকে আর্থিক সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে চেয়ারম্যান বদলের প্রয়োজন। আমরা চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। 

    শহরে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৯৫০জন সাফাইকর্মী রয়েছেন। এত সাফাইকর্মী থাকলেও কেন নিয়মিত বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে না-বাসিন্দারা সেই প্রশ্ন তুলছেন। চেয়ারম্যানের অবশ্য অকপট স্বীকারোক্তি, এর মধ্যে বহু কর্মী কোনও কাজ করেন না। পুরসভা সূত্রে খবর, যখন যে ক্ষমতায় থেকেছে, নিজেদের মতো সাফাইকর্মী নিয়োগ করে গিয়েছে। শুধু সই করা এই কর্মীদের ছাঁটাই করতে না পারলে অর্থসঙ্কট কাটবে না।

    বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম রায় বলেন, কাউন্সিলাররা পুরসভা লুটেপুটে খাচ্ছেন। মাস গেলে ঘুরপথে ২০হাজার টাকা তুলছেন। অথচ সাফাইকর্মীদের বেতন বন্ধ! বেশিরভাগ কাউন্সিলার নিজের এলাকায় ঠিকমতো সাফাই হচ্ছে কি না-তা দেখছেন না।

    পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, শুধুমাত্র সাফাইকর্মীদের বেতন বাবদ মাসে ৪০লক্ষ টাকা খরচ হয়। বর্তমানে একমাসের বেতন বাকি। এপ্রিলও শেষ হতে চলল। এই বিপুল সংখ্যক সাফাইকর্মীদের বেতন পুরসভা কবে দেবে, কবে পুর পরিষেবা স্বাভাবিক হবে-সেই প্রশ্নই তুলেছেন বাসিন্দারা।
  • Link to this news (বর্তমান)