ওড়িশায় কাজের সন্ধানে যাওয়ার পথে জঙ্গিপুরের শ্রমিকদের মারধর
বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: রুজি রোজগারের টানে ওড়িশায় কাজের সন্ধানে যাচ্ছিলেন জঙ্গিপুরের পরিযায়ী শ্রমিকরা। ওড়িশায় বাস ঢুকতেই একদল দুষ্কৃতী আক্রমণ চালায় বলে দাবি। বাস থেকে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয় শ্রমিকদের। প্রাণ হাতে করে কোনওরকমে পালিয়ে আসেন শ্রমিকরা! তাঁদের চোখে মুখে রীতিমতো আতঙ্কের ছাপ। আরও বেশ কয়েকজন শ্রমিক সেখান থেকে ফিরতে পারেননি বলে দাবি। ভয়ে তারা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকি শ্রমিকরা সেখান থেকে পালিয়ে এসে গভীররাতে জঙ্গিপুরে ফিরে আসেন। স্থানীয় পুলিস ও প্রশাসন ওড়িশা প্রশাসনের কথা বলুন এমনটাই চাইছেন শ্রমিকরা। ওড়িশার ও প্রচুর শ্রমিক মুর্শিদাবাদে কাজ করেন। উভয় রাজ্যের শ্রমিকরা শান্তিতে কাজ করার নিরাপত্তা চান।
এ প্রসঙ্গে জঙ্গিপুরের এসডিও একাম জে সিং বলেন, ফিরে আসা শ্রমিকদের খোঁজ নেবো। বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
জানা গিয়েছে, গত রবিবার সন্ধ্যায় রঘুনাথগঞ্জের উমরপুরে একটি বেসরকারি বাসে জঙ্গিপুর মহকুমার জনা ৬২ শ্রমিক ওড়িশায় কাজের সন্ধানে যায়। অধিকাংশ শ্রমিকই জঙ্গিপুর,রঘুনাথগঞ্জও সূতি থানা এলাকার। তাঁদের ওড়িশার কেওনঝরে যাওয়ার কথা ছিল। বাসটি ময়ূরভঞ্জ জেলার জসিপুরে পৌঁছাতে জনা দশেক দুষ্কৃতী বাস আটকায়। চালকের জামার কলার ধরে টেনে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। তারপর যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। দুষ্কৃতীদের হাতে লাঠি, রড ও লোহার চেন ছিল। তা দিয়েই আক্রমণ করে। ভয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী সঙ্গের ব্যাগপত্র ও সরঞ্জাম ফেলে এদিক ওদিক ছুটে পালায়। বাকী যাত্রীদের মারধর করে বাংলায় ফিরে যেতে বলে। নইলে খুন করা হবে বলে হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। বাধ্য হয়ে সেই বাসে করেই জনা ৪৫ শ্রমিক ফিরতে বাধ্য হয়। তারপর ও দুষ্কৃতীরা বাইক নিয়ে পিছু ধাওয়া করে। ফের পথে আটকে শ্রমিকদের মারধর করে। পরিযায়ী শ্রমিকরা সংখ্যায় বেশী জন থাকলেও দুষ্কৃতীদের প্রতিহত করতে সাহস করেনি। প্রাণ হাতে করেই তারা পালিয়ে আসে।
রঘুনাথগঞ্জের মিঠিপুরের পরিযায়ী শ্রমিক ইউসুফ শেখ বলেন, হাতে রড, লাঠি ও লোহার চেন নিয়ে এসে বাস থামাতে বলে। তারপর আমাদের মারধর শুরু করে। সাইদাপুরের পিয়ারুল শেখ বলেন, থানার পাশেই আমাদের মারধর করা হয়েছে। পুলিসকে ডাকলেও তারা আসেনি। এমনকি সাধারণ মানুষও আমাদের সাহায্য করেনি। নবকান্তপুরের শ্রমিক নাসির শেখ বলেন, ওরা বলছে বাংলার লোকজনকে ওড়িশায় ঢুকতে দেবে না। আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি। সূতির হাড়োয়ার মোমিন মিশস বলেন, ওড়িশার ও প্রচুর শ্রমিক বাংলায় কাজ করেন। আমরা চাই ওরাও কাজ করুক আমাদেরও কাজ করতে দিক।
জেলা পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক তথা হাইস্কুল শিক্ষক আসিফ ফারুক বলেন, বাংলার শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা চেয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। আমরা আক্রান্ত শ্রমিকদের পাশে রয়েছি।