• চুনাপাথর সমৃদ্ধ বেলপাহাড়ীতে গড়ে উঠুক শিল্প
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঘন সবুজ বনানি আর মাঝে মাঝে ছোট পাহাড়, স্থানীয়রা যাকে বলে ডুংরি, তার মাতাল করা রূপের টানে পর্যটকরা ছুটে আসেন বেলপাহাড়ীতে। কিন্তু তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পান না যে, এই বেলপাহাড়ীতেই এককালে গড়ে উঠেছিল শিল্প। চেষ্টা করলে হয়তো বেলপাহাড়ী হয়ে উঠতে পারত সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানকার ঠাকুরানপাহাড়ীতে গড়ে উঠেছিল চিনেমাটির কারখানা। কটুচুয়া ও ডাকাই থেকে সাদা ও লাল রঙের চুনাপাথর সংগ্ৰহ করা হতো। তা থেকে কারখানায় ধৌত প্রক্রিয়ায় চিনেমাটির কাঁচামাল তৈরি হতো। দুশোর বেশি শ্রমিক কাজ করতেন সেখানে। ভারতজুড়ে ছিল তার বাজার। কিন্তু গত ৫০ বছর ধরে সেই কারখানা বন্ধ। বেলপাহাড়ীর চুনাপাথর সমৃদ্ধ এলাকা আজও উপেক্ষিত। স্থানীয়রা চান, এখানে গড়ে উঠুক শিল্প। তাতে তাঁরা কাজের সুযোগ পাবেন। 

    বিনপুর-২ ব্লকের বেলপাহাড়ীজুড়ে চুনাপাথরের ছোটবড় পাহাড় ছড়িয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যাদের হলুদ, সাদা, লাল পাথরের পাহাড় বলে। দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই পাহাড় দেখতে ছুটে আসেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই এলাকায় শিল্পাঞ্চল হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল। চুনাপাথর সমৃদ্ধ ঠাকুরানপাহাড়ীতে ১৯৫৭ সালে চিনেমাটির কারখানা গড়ে ওঠে। তৎকালীন রাজ্য সরকার কারখানা কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দিয়েছিল। কুটুচুয়া, ডাকাই ও বালিচুয়ার মৃগাডুঙ্গি থেকে চুনাপাথর মিশ্রিত মাটি সংগ্রহ করা হতো। কুটুচুয়ার সাদা রঙের চিনা মাটি ও ডাকাইয়ের লাল রঙের চিনামাটি পাওয়া যেত। পরিস্রুত চিনামাটি কলকাতা ও দুর্গাপুরে পাঠানো হতো। যা দিয়ে কাপ, ডিশ, পট, পুতুল, দোয়াত, ইনসুলেটরের মতো জিনিসপত্র তৈরি হতো। রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতবর্ষের বড় বড় বাজারে চিনামাটির সেইসব জিনিসপত্র বিক্রি হতো। কারখানাটির উৎপাদন ১৯৬৭ সাল নাগাদ শিখর ছোঁয়। শ্রমিক সংখ্যা বাড়ে। স্থানীয় আদিবাসীরাই সেখানে কাজ করত। আরও বহু সংস্থা সে সময়ে চিনেমাটির কারখানা গড়ার আগ্ৰহ প্রকাশ করেছিল। ১৯৭৪ সালে রাজনৈতিক ডামাডোলে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। বহু শ্রমিক কাজ হারান। রাজ্য বিধানসভাও বিষয়টি উঠেছিল। এখনও ঠাকুরানপাহাড়ীতে সেই কারখানার ভগ্নাবশেষ রয়েছে। ডুলংডিহা গ্ৰামের বাসিন্দা পঁচাত্তর বছরের বাবুলাল হেমব্রম বলেন, যুবক বয়সে কারখানায় কাজ করতাম। কুটুচুয়া, ডুলুংডিহা, মাঝগেরিয়া ছাড়াও আশপাশের গ্ৰামের মানুষ কাজ করতেন। কারখানায় ভিতর বড় বড় চৌবাচ্চা ছিল। চৌবাচ্চায় মেশিন ছিল। খাদান থেকে আনা চুনাপাথর মিশ্রিত মাটি সেখানে ধোয়া হতো। তরল চিনামাটি চাতালে শুকোনো হতো। সেগুলো বাইরে নিয়ে যাওয়া হতো। মেয়েরা দৈনিক ৫০ পয়সা ও ছেলেরা ১ টাকা মজুরি পেত। বাম আন্দোলনের জেরে কারখানা যখন বন্ধ হয় তখন আমাদের আড়াই টাকা মজুরি ছিল। কাজ হারানোর পর পাহাড়ের জমি কেটে চাষবাস শুরু করি। সেই সময়ে আমাদের খুব কষ্টে দিন কেটেছে। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা এখনও কারখানার গল্প করেন। শিমুলপাল গ্ৰাম পঞ্চায়েত প্রধান লক্ষ্মী হেমব্রম বলেন, এলাকায় এখনও রোজগারের সমস্যা রয়েছে। পাহাড়ী জমিতে ছেলেরা চাষবাসের কাজ করে। মেয়েরা বাবুই ঘাসের জিনিসপত্র তৈরি করে। চিনেমাটির কারখানা গড়ে উঠলে স্থানীয় যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান হবে। জামবনীর সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ের ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান প্রণব সাউ বলেন, বেলপাহাড়ী এলাকায় চুনাপাথরের পাহাড় রয়েছে। চুনাপাথর কতটা পাওয়া যাবে তার অনুসন্ধান দরকার। পর্যাপ্ত চুনাপাথর থাকলে এলাকায় শিল্প গড়া সম্ভবনা আছে।  ভগ্ন অবস্থা বেলপাহাড়ীর চিনামাটির কারখানার।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)