‘মা অসুস্থ, সাহায্য চাই’, ব্লগ থেকে নম্বর নিয়ে অভিনব প্রতারণা, ধৃত
বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ফেসবুক বা ইউটিউবে কারা বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন করছেন এবং সেখান থেকে কারা নিয়মিত কেনাকাটা করছেন—তা ভালোভাবে খেয়াল করতেন বছর পঁচিশের এক যুবক। ক্রেতাদের নাম ও ফোন নম্বর একটি কাগজে লিখে রাখতেন। তারপর ফোন যেত সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়া দোকানের মালিকের কাছে। নিয়মিত কেনাকেটা করা ক্রেতার নাম-পরিচয় দিয়ে ওই যুবক তাঁর পরিবারের কারও বিপদ বা অসুস্থতার কথা বলে ই-ওয়ালেটে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করতেন। এই কৌশলেই একাধিক ব্যক্তিকে ওই যুবক প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছিলেন বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত রাজাবাগান থানার পুলিস হাওড়ার শিবপুর থেকে সৌভিক মুখোপাধ্যায় নামে অভিযুক্ত প্রতারককে গ্রেপ্তার করে। তিনি এই কৌশলে কত টাকা তুলেছেন, ই-ওয়ালেট ঘেঁটে তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস।
সূত্রের খবর, সৌভিক স্নাতক হওয়ার পর কোনও চাকরি পাননি। ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সারাদিন সেখানে তিনি খোঁজ করতেন, কারা জামাকাপড়, খাবার সহ অন্যান্য পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপণ দিচ্ছেন। পণ্য ভালো বা সস্তা কি না, এসব নিয়ে কারা মন্তব্য করছেন, তাও খেয়াল রাখতেন সৌভিক। ভিডিও বা রিলসেই তিনি দেখে নিতেন দোকানের মালিক বা ম্যানেজারকে। ওই দোকানের পণ্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কারা ভিডিও বা রিলস ‘আপলোড’ করছেন, সেদিকেও তাঁর নজর থাকত। তাঁদের নাম ও ফোন নম্বর সোশ্যাল সাইট থেকে জোগাড় করে সংশ্লিষ্ট ক্রেতার পরিচয়ে ফোন করতেন দোকানের মালিক বা ম্যানেজারকে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন ১৫ আগে রাজাবাগান এলাকার এক ব্যবসায়ীকে তাঁর এক বিশ্বস্ত ক্রেতার নাম করে ফোন করেন অভিযুক্ত। মা অসুস্থ বলে জানিয়ে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন বলে অভিযোগ। দিন কয়েক পর ব্যবসায়ী ওই ক্রেতাকে ফোন করে তাঁর মায়ের শরীরস্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। স্বভাবতই আকাশ থেকে পড়েন ওই ক্রেতা। জানান, টাকা চেয়ে কোনও ফোন তিনি করেননি। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে রাজাবাগান থানায় অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী। যে নম্বর থেকে ফোনটি এসেছিল, সেটির সাবস্ক্রাইবার আইডি থেকে জনৈক সৌভিক মুখোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া যায়। এরপরই পুলিস হাওড়ার শিবপুরের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত পুলিসকে জানিয়েছে, কাজকর্ম না পাওয়ায় তিনি অনেকদিন ধরেই এই কাজ কারছিলেন। যাতে কোনও সন্দেহ না হয়, তার জন্য সাধারণত আট থেকে দশ হাজার টাকা চাইতেন। টাকা ই-ওয়ালেটে জমা পড়ত। তাই দিয়েই চলত তাঁর হাতখরচ। এর পাশাপাশি ধৃতের একাধিক নেশা রয়েছে বলেও জেনেছে পুলিস।