• গোটা দেশে জাল নোট ছড়ানোর পান্ডা মালদহের তাহির, খুঁজছেন গোয়েন্দারা
    বর্তমান | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাল নোট ছড়ানোর অন্যতম পান্ডা মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা তাহির শেখ।  বিভিন্ন রাজ্যে তার এজেন্ট ছড়িয়ে রয়েছে। মোটা টাকার কমিশনে তার গ্রুপে এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে  যুবকরা। এই তাহেরকে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বাংলাদেশে কারবারের মাথাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় নিয়মিত সীমান্ত পেরিয়ে সে জাল নোট নিয়ে আসছে বলে খবর। বারবার মোবাইল নম্বর ও হ্যান্ডসেট বদলানো এই অভিযুক্তকে ধরাই এখন চ্যালেঞ্জ অফিসারদের। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সির মাথা ব্যথার কারণ তাহির শেখকে দৌলতপুর গ্রাম থেকে বিএসএফের সহযোগিতায় ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে গ্রেপ্তার করেছিল এনআইএ। পরে জামিন পেয়ে ফের জাল নোট পাচারের কারবারের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে সে।   

    বিগত কয়েকমাসে গুজরাত, দিল্লি সহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। ধরা পড়েছে একাধিক ব্যক্তি। যারা সংশ্লিষ্ট রাজ্যেরই বাসিন্দা। তাদের জেরা করে পুলিস জেনেছে, এই নোট এসেছে মালদহ থেকে। তবে জাল নোট নিত পশ্চিমবাংলায় যেতে হচ্ছে না। মাঝপথে তৃতীয় কোনও জায়গায় হাতবদল ঘটছে  জাল নোটের। গুজরাত, দিল্লি সহ আরও কয়েকটি জায়গা থেকে যারা ধরা পড়েছে, তারা সকলেই ক্যারিয়ার।  কমিশনের বিনিময়ে কাজ করছে। তাদের নিয়োগ করেছে তাহির শেখ। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এই মুহূর্তে মালদহ সীমান্তকে ভরকেন্দ্র বানিয়ে গোটা ভারতে জাল নোটের যে কারবার, তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে তাহির। বিভিন্ন রাজ্যে তার লোক ছড়ানো রয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে কারবার দেখভালের জন্য এক বা দুজন করে মাথা বসিয়েছে। যাদের কাছে ক্যারিয়ার মারফৎ পৌঁছে যাচ্ছে নকল ৫০০ বা ১০০ টাকার নোট। কত টাকা কোথায় যাবে তাহের তা আগেই জানিয়ে দিচ্ছে। এই নোট পাচারের জন্য তাহের আবার একাধিক ক্যারিয়ার নিয়োগ করেছে প্রতিটি রাজ্যে। যারা একে অপরকে চেনে না। মালদহের এজেন্ট নোট পাওয়ার পর ট্রেনে বা বাসে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সীমানায় পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানে হাজির হচ্ছে তাহিরের অন্য এজেন্ট। দুজনকে চিনে নিতে যাতে অসুবিধা না হয় তাই দুপক্ষের মোবাইলে থাকছে কারেন্সি নোটের ছবি। সেই নোটের নম্বর সংশ্লিষ্ট দুজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে হোয়াটঅ্যাপে। সেই নম্বর মিলিয়ে তবেই হাতবদল হচ্ছে জাল নোটের কনসাইনমেন্ট।   

    কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে তাহির শেখ ক্যারিয়ার হিসেবে মালদহ থেকে বাংলাদেশে গিয়ে টাকা আনত। সেই সুবাদে তার সঙ্গে বাংলাদেশে জাল নোট কারবারে জড়িতদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়। এরপর নিজেই কারবার খুলে বসে। প্রথমে কলকাতা, বিভিন্ন জেলা ও পড়শি রাজ্যে জাল নোট পাঠাত।  এরপর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যের যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে। তাদের নিয়ে ক্লোজড গ্রুপ তৈরি করে। ভিন রাজ্যের যুবকদের এক একটি জায়গার মাথা করে তাহির। তাদের কাছে ক্যারিয়ার মারফৎ জাল নোট মালদহ থেকে পাঠাচ্ছে মুল কিং পিন। মোস্ট ওয়ান্টেড এই অভিযুক্তের কাছে জাল নোট  ছড়িয়ে যে টাকা আসছে, তার লেনদেন চলছে অন্যের নামে খোলা ই-ওয়ালেট থেকে। সেই সূত্র ধরে তার নাগাল পেতে মরিয়া গোয়েন্দারা।  
  • Link to this news (বর্তমান)