• তালিকা না পেলে পথ ছেড়ে যাবেন না ‘যোগ্য’রা, জট থেকেই গেল
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী, তারপরে শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা এবং শেষে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সঙ্গে বৈঠকের পরেও ঘেরাও–আন্দোলন থেকে সরছেন না চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকারা। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ডিআই–দের কাছে তথাকথিত ‘যোগ্য’দের তালিকা পাঠিয়েছেন স্কুল এডুকেশন কমিশনার। তার পরেও রাস্তা ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়েছেন কর্মহারারা। তাঁদের দাবি — অবিলম্বে ‘যোগ্য–অযোগ্য’ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এবং ‘অযোগ্য’দের চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

    এ দিন প্রথমে শালবনির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরে কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু — দু’জনেই আন্দোলনরতদের স্কুলে ফেরার আহ্বান জানান। বিকেলের দিকে আবার এসএসসি–র চেয়ারপার্সন সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেন চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা। বেশ খানিকক্ষণ চলে সেই বৈঠক। কিন্তু তাতেও জট কাটেনি।

    বৈঠক শেষে চাকরিহারা টিচারদের অন্যতম নেতা চিন্ময় মণ্ডল জানান, ডিআই–দের কাছে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তার ক্ল্যারিফিকেশনের জন্যই চেয়ারপার্সনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাঁদের। চিন্ময়ের কথায়, ‘একটা কথা অন্তত জানা গিয়েছে, মোট যে ক’টা কাউন্সেলিং হয়েছে, তার সবগুলি থেকেই চাকরি পাওয়া যোগ্য শিক্ষকদের বেতন হবে।’

    তা হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করছেন না কেন? চিন্ময়ের জবাব, ‘আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। কারণ, আমরা শুধু ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে চাইছি, তা নয়। বেতনের দাবিতেও রাস্তায় বসিনি। আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাইছি। যতক্ষণ না যোগ্য–অযোগ্য তালিকা বেরোচ্ছে, যোগ্যদের সরকার সার্টিফাই করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ছি না। ঘেরাও তুলছি না। চেয়ারম্যান স্যরেরও বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না।’ একই সঙ্গে চাকরিহারারা জানান, ‘অযোগ্য’দের কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে না, তা জানতে আজ, বুধবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদে যাবেন তাঁরা। আবার, শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, লিস্ট বের করা সম্ভব নয়। এর ব্যাখ্যা চাইতেও কথা বলা হবে মন্ত্রীর সঙ্গে।

    আন্দোলন থেকে না–সরার এই সিদ্ধান্ত শুধুই নেতাদের, তা কিন্তু নয়। নাওয়া–খাওয়া ভুলে চড়া রোদে যে সাধারণ চাকরিহারারা অবস্থান করছেন, তাঁদের গলায়ও এক সুর। নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা, ‘যোগ্য’ কর্মহারা পৃথা ঘোষের কথায়, ‘চাকরি পেয়েছিলাম নিজের যোগ্যতায়। আর চাকরি গিয়েছে সরকারের অযোগ্যতায়। সরকার যদি ডিআইদের যোগ্য–অযোগ্যের তালিকা দিতে পারে, সেটা প্রকাশ্যে আনতে অসুবিধে কী? কার থেকে কী আড়াল করতে চাইছেন তাঁরা?’

    বেলঘরিয়ার বাসিন্দা তন্বিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা চাপে রেখেছিলেন বলেই ডিআই–দের অন্তত একটা তালিকা দিয়েছে সরকার। আরও চাপ বাড়ালে সেটা প্রকাশ্যে আনা হবে। তাই আন্দোলন থেকে সরছেন না তাঁরা।

    কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো এ দিনও তাঁদের স্কুলে ফিরতে বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাতে কি এঁরা সন্তুষ্ট নন? পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ব্যানার্জিডাঙা হাইস্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক আতেকা বানু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী অনেকবার ললিপপ দেখিয়েছেন। আমরা আর ওঁর ললিপপে ভুলছি না। উনি শুধু শিক্ষা দপ্তরকে বলে দিন যোগ্য–অযোগ্যের তালিকা প্রকাশ করতে। আমাদের দাবি মানা না হলে স্কুলে যাব না।’

    কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা নিয়ে আপাতত ধোঁয়াশাতেই আছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

  • Link to this news (এই সময়)