• সংস্কারের জন্য পাঁচ মাস বন্ধ তিস্তা ব্যারাজ সেতু, পর্যটনে ধাক্কার আশঙ্কা
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, মালবাজার: উত্তরের অন্যতম তিস্তা ব্যারাজ সেতু সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দপ্তরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ১৪০ দিনের জন্যে এই সেতু বন্ধ থাকছে। এ দিন বৈঠকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সেচ দফতরের তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী আধিকারিক–সহ অন্য আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

    এই সিদ্ধান্ত জানার পরই ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয় ডুয়ার্সে। গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ সেতু দীর্ঘদিন ধরে যে দুর্বল হয়ে পড়েছিল সেটা যেমন বাস্তব, তেমনি প্রায় পাঁচ মাস ধরে যদি এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি বন্ধ থাকে, তাহলে ডুয়ার্সের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের প্রধান শহর শিলিগুড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়বে।

    শুধুমাত্র সেবকের পাহাড়ি পথ দিয়ে করোনেশন সেতুই হবে শিলিগুড়ি যাওয়ার একমাত্র পথ। আর এতেই প্রমাদ গুনছেন এলাকার ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ বাসিন্দারা। কারণ বর্ষাকালে সেবকের পথ খুবই বিপদসঙ্কুল। যে কোনও সময়ে ধস নেমে এই পাহাড়ি পথ বন্ধ হয়ে যায়।

    জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সেচ দপ্তরের তরফে আগেই সেতু সংস্কারের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ঠিকাদার সংস্থাকে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদার সংস্থা কাজ করতে সেতু বন্ধের আবেদন করেছিল। তাই বন্ধ করা হচ্ছে। মোট এক কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার এই সংস্কার কাজ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল বলে সেচ দপ্তরের অন্দরের খবর। গত বছর রাজ্যের মুখ্যসচিব পরিদর্শন করলে সংস্কার কাজে গতি আসে।

    রাজ্যের সেচ দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘সেতু বন্ধের বিষয়ে জেলা স্তরে বৈঠক হয়েছে বলে শুনেছি। লিখিত নির্দেশিকা আসেনি, তবে সেতু সংস্কারের বিষয়ে আমরা আগে থেকেই উদ্যোগী হয়েছি।’ ডুয়ার্স থেকে বিভিন্ন নদীর বালি–পাথর এই সেতু দিয়ে শিলিগুড়ির পথে চলে যেত।

    কিন্তু মুখ্যসচিবের পরিদর্শনের পর উচ্চতা রোধ করা লৌহস্তম্ভ দিয়ে সেতুর দু’পাশ আটকে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে জলপাইগুড়ি তিস্তা সেতু দিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ অতিক্রম করে শিলিগুড়ি যেতে হয়। তাড়াতাড়ি সেতুর সংস্কারের দাবিতে গত সোমবার থেকে গজলডোবা এলাকায় আমরণ অনশন মঞ্চ বানিয়ে স্থানীয় ট্রাক মালিকরা অনশনে বসেছিলেন। স্বভাবতই সেতু সংস্কার হবে জেনে খুশি হয়েছেন তাঁরাও। কিন্তু তার জন্য দীর্ঘদিন যে সেতু বন্ধ থাকবে, সেটা তাঁরা ভাবতে পারেননি।

    জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে সেতু সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে তা জানিয়েছেন। গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী বাস্তুকার সুনীলকুমার সিং বলেন, ‘সেতুর দু’পাশের হাঁটার পথ খোলা থাকবে।’

    অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড টুরিজম (অ্যাক্ট)–এর ক্রস বর্ডার কর্মকর্তা তন্নিষ্ঠা রক্ষিত বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তে আমরা বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। গাড়ি ভাড়া বহু গুণ বেড়ে যাবে। পর্যটকদের ভোগান্তি মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পাবে।’ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে এই সিদ্ধান্ত কী করে নেওয়া হলো, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’

    বাগডোগরা বিমানবন্দর,এনজেপি রেলস্টেশন থেকে যত পর্যটক ডুয়ার্সে আসেন তাঁরা সকলেই গজলডোবার এই সেতু দিয়েই ডুয়ার্সে প্রবেশ করেন। দুর্গাপুজোর মাত্র ১৩ দিন আগে পর্যন্ত যদি এই সেতু বন্ধ থাকে তাহলে পর্যটন শিল্পের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বহু কোটি টাকার বাণিজ্য লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে পর্যটন শিল্পের। মালবাজারের তৃণমূল কাউন্সিলর পুলিন গোলদার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবিস্তারে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে জানান।

  • Link to this news (এই সময়)