• ‘বাড়িতে সন্তান কাঁদলেও, আমার মতো মায়েরা আন্দোলন থেকে সরবে না’
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • স্বাগতা মিশ্র, শিক্ষিকা

    ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা করব। স্কুল-কলেজে পড়তে পড়তে তারই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। চাকরি পাওয়ার পরে সংসারটা গুছিয়ে উঠেছিল। আজ সংসার, বাচ্চাকে ফেলে দু’দিন ধরে রাস্তায় বসে আছি। বলতে পারেন আমার কি দোষ? আমি তো টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি।

    কাল থেকে রাস্তায় শুয়ে আছি। ঠিকমতো জল নেই, খাবার নেই। কোথায় টয়লেট করব তারও ঠিক নেই। এই জন্যই কি শিক্ষিকা হয়েছিলাম?

    যে দিন থেকে এসএসসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণা হয়েছে, পাড়া-প্রতিবেশী মানুষজন সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাঁরা হয়তো ভাবছেন আমিও টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছি!

    আমার এবং আমার মতো প্রত্যেক যোগ্যদের একটাই দাবি, আমরা যে কষ্ট করে ন্যায্য ভাবে চাকরি পেয়েছি, তার বৈধতা দেওয়া হোক। যাঁরা অযোগ্য, তাঁদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে, সেই তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হোক। এখনও সময় আছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের মাইনে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

    আমরা কি ৬০ বছর পর্যন্ত মাইনে পাব?

    সেটা নিশ্চিত করা হোক। তবেই আমরা আন্দোলন তুলব। না–হলে এ ভাবেই রাস্তায় সংসার ফেলে পড়ে থাকতে অসুবিধা নেই। যে ঘুষ দিল এবং যে ঘুষ নিল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হোক। কেন অযোগ্যদের ওএমআর প্রকাশ করা হচ্ছে না? এর আগে হাইকোর্ট অনেক দিন সময় দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিল এসএসসির কাছে। অযোগ্যদের চিহ্নিত করলে সরকারের কী ক্ষতি, সেটা আমাদের বলতে হবে। সরকার যদি কোনও ভুল করে না–থাকে, তা হলে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে এত বাধা কোথায়?

    আমার এক বছরের ছেলে। যখন তার মাকে প্রয়োজন, তখন আমি রাস্তায় এ ভাবে পড়ে রয়েছি। আমার মতো অনেক মায়েরাই এ ভাবে পরিবেশের মধ্যে গত কয়েক ঘণ্টা কাটাচ্ছি। এই যন্ত্রণা কি বুঝতে পারছে না এই সরকার। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সঠিক ভাবে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এত লোক, অথচ বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়নি। জল ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই লড়াই তা–ও থামবে না! বাড়িতে সন্তান কাঁদলেও আমার মতো অনেক মায়েরাই আন্দোলন চালিয়ে যাবে...।

  • Link to this news (এই সময়)