এই সময়: বাইরে চাকরিহারাদের স্লোগান, ‘আচার্য সদন ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ অথবা ‘এসএসসি–র চেয়ারম্যানের কালো হাত ভেঙে দাও’, কখনও আবার ‘ব্রাত্য তুমি নাটক করো, শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ার ছাড়ো।’ সল্টলেকের আচার্য সদনে এসএসসি অফিসের বাইরে সোমবার রাতভর চাকরিহারাদের নানা স্লোগানে কান পাতাই দায়। প্রচণ্ড গরমে সারা রাত আন্দোলন চালিয়েছেন তাঁরা।
আর এসএসসি অফিসের ভিতরে ঘেরাও হয়ে রাতভর আটকেছিলেন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার–সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিক। তখন ক্রিমক্র্যাকার বিস্কুট আর মিনারেল ওয়াটারেই ডিনার সারছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) চেয়ারম্যান। রাতে চেয়ারে বসেই কোনওমতে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া!
সোমবার রাতে এসএসসি ভবনে আটকে পড়া আধিকারিকদের জন্য প্রথমে বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করা হলেও তা ঢুকতে দেননি আন্দোলনকারী চাকরিহারারা। তাঁদের দাবি, এসএসসি–র আধিকারিকদের জন্য বিরিয়ানি, এগরোল এবং পিৎজার অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরাই পুলিশের হাত থেকে সেই খাবার কেড়ে ফেলে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সিদ্ধার্থ অবশ্য বলেন, ‘কারা এ সব বলছে জানি না। সোমবার রাতে বাইরে থেকে আনা ওষুধও পুলিশের হাত থেকে কেড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অফিসে আমি একা ছিলাম না। সব মিলিয়ে ২৫ জন কর্মী ও আধিকারিক আটকে পড়েছিলেন।’ তাঁর সংযোজন, ‘চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমি সোমবার বিকেল ও সন্ধ্যায় দু’দফায় সাড়ে চারঘণ্টা বৈঠক করেছি।’
১৮ ঘণ্টা ঘেরাওয়ের পরে মঙ্গলবার সকালেও সিদ্ধার্থদের জন্য বরাদ্দ ছিল শুধু নুন–চিনির জল। এ দিন সকালে এসএসসি–র নিরাপত্তা কর্মীরা ভবনে আটকে থাকা আধিকারিক ও কর্মীদের জন্য চা, বিস্কুট এবং ভাঁড় নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। বাইরে থেকে এক ব্যক্তি চা দিতে ঢুকছিলেন আচার্য সদনে।
অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা তাঁর হাত থেকে মাটির ভাঁড় কেড়ে ভেঙে ফেলে দেন। তবে বেলা গড়াতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন বিধাননগরের কমিশনারেটের ডিসি অনীশ সরকার। তিনি দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় চাকরিহারাদের বোঝাতে সমর্থ হন যে, এসএসসি অফিসে থাকা কর্মী এবং আধিকারিকদেরও মানবাধিকার আছে। এসএসসি–র চেয়ারম্যানের বয়স ৬৫ বছর। ওঁর কিছু হয়ে গেলে আন্দোলনকারীরাও বিপদে পড়ে যাবেন।
এরপরে ঘেরাও চললেও অবশ্য খাবার–ওষুধ ঢোকায় আপত্তি করেননি আন্দোলনকারীরা। সূত্রের খবর, এসএসসি অফিসে আটকে থাকা চেয়ারম্যান ও অন্য আধিকারিকদের জন্য বেলার দিকে পাউরুটি, চা, লাড্ডুও এবং দুপুরের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল আর আলুচোখা।
করুণাময়ীতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে আবার ঘেরাও–বিক্ষোভ চালাচ্ছেন চাকরিহারা তথাকথিত ‘যোগ্য’ শিক্ষাকর্মীরা। সেখানে পর্ষদের ২৫ জন কর্মী ও আধিকারিক আটকে রয়েছেন সোমবার রাত থেকে। যদিও পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় সোমবার রাতেই নিবেদিতা ভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান।
এ দিন দুপুরে পর্ষদ সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পাশে বসে সাংবাদিক বৈঠকও করেন। চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা মঙ্গলবারও পর্ষদের নিবেদিতা ও ডিরোজিও ভবনের সমস্ত গেট আটকে দেওয়ায় পর্ষদ সভাপতির পাশাপাশি সচিব সুব্রত ঘোষও এ দিন অফিসে ঢুকতে পারেননি। তাঁদের মূল চিন্তা এখন মাধ্যমিকের রেজ়াল্ট।
এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ছাত্রছাত্রী। এখনও পর্ষদের অ্যাডহক কমিটি বৈঠকে বসতে পারেনি। এ দিকে, পর্ষদের অফিসের ভিতরেও অনশনে বসে রয়েছেন আটজন শিক্ষাকর্মী। তাঁদের অভিযোগ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসের পাশেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অফিস বিদ্যাসাগর ভবন। সেখানকার ক্যান্টিনে রান্না করা খাবার পাঠানো হচ্ছে পর্ষদের অফিসের আধিকারিকদের জন্য।