এই সময়: পাশে আছি, পাশে থাকব — এই বার্তা নিয়েই সল্টলেকে চাকরিহারাদের অবস্থানে হাজির হচ্ছেন চাকরিরত টিচাররা। এঁদের মধ্যে অনেকে আসছেন দূরের জেলা থেকেও। ‘যোগ্য–অযোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে সোমবার রাত থেকে সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) অফিস ‘আচার্য সদন’ ঘেরাও করে অবস্থানে বসেছেন কর্মহারারা। তালিকা প্রকাশ না করলে অবস্থান চলবে। মঙ্গলবারও পথেই বসে থাকেন চাকরিহারারা। সেখানেই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে উপস্থিত হন বর্তমান শিক্ষক–শিক্ষিকারা।
এর সূত্রে আরও একবার ফিরে আসছে আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ–খুনের প্রেক্ষিতে আন্দোলনের স্মৃতি। তখন বিচারের দাবিতে সল্টলেকেই স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন চিকিৎসকরা। আন্দোলনের খরচ জোগানোর জন্য মোটা অঙ্কের তহবিলও গড়েছিলেন তাঁরা। পাশে পেয়েছিলেন সমাজের নানা স্তরের, নানা ক্ষেত্রের মানুষকে।
কর্মহারা শিক্ষকদের আন্দোলনেও অনেকটা তেমন ছায়া। এ ক্ষেত্রেও তহবিল উঠবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনকারীদের একজন জানান, অনেকেই অর্থসাহায্যের জন্য যোগাযোগ করছেন। কিন্তু এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বামনঘাটা হাই স্কুলের ৩৯ জনের মধ্যে ছ’জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। তাঁরা রয়েছেন অবস্থানে। সেখানেই তাঁদের জন্য বিস্কুট, জল, ওআরএস নিয়ে মঙ্গলবার সকালে হাজির হন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানস হালদার। তাঁর কথায়, ‘এই বিপদের দিনে ওঁদের পাশে তো দাঁড়াতে হবেই। স্কুলের টিচাররা পালা করে আসবেন বলে ঠিক হয়েছে।’ সকাল থেকে আচার্য সদনের সামনে ছিলেন শ্যামবাজারের একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষিকা বিপাশা রায়চৌধুরী। জানান, তাঁর তিন কর্মহারা সহকর্মীর পাশে দাঁড়াতেই সেখানে গিয়েছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক আখতার আলি এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক বিপ্লব বসু আবার কেক, বিস্কুট, জল নিয়ে পৌঁছন আন্দোলনস্থলে। বহরমপুর কাশিমবাজারের একটি স্কুলের শিক্ষিকা পাপিয়া হালদার, সুমনা চৌধুরীরা জানান, তাঁদের স্কুলের চারজনের চাকরি গিয়েছে। ওই স্কুলেরও শিক্ষক–শিক্ষিকারা পালা করে সল্টলেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন তোলেন — গোটা শিক্ষক সমাজ এখনও কেন পথে নামছে না? কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা–র রাজ্য সভাপতি শুভোদয় ভট্টাচার্য বলেন,‘আমরা সব সময়ে চাকরিহারাদের পাশে ছিলাম, এখনও আছি।’
সরকারি স্কুলের টিচারদের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দেবাশিস সরকার জানান, চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীরা যেখানেই আন্দোলন করবেন, সেখানেই পাশে দাঁড়াবে তাঁদের সংগঠন।