এই সময়: মুর্শিদাবাদ নাকি সল্টলেক? ভোট–রাজনীতির পাটিগণিতে কোথায় লাভের অঙ্ক বেশি, আপাতত সেটাই মাপার চেষ্টা করছেন বঙ্গ–বিজেপির নেতারা।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে গোটা বাংলার নজর সল্টলেকে এসএসসি অফিসের বাইরে। সেখানে ধর্নায় বসেছেন চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকারা। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি তা নিয়ে রাজ্য সরকারকে চেপে ধরবে, সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকাদের পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট করা ছাড়া বঙ্গ–বিজেপির শীর্ষ নেতাদের আর কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার দলের শীর্ষ নেতারা অনেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সামিল হলেও নিয়োগ–দুর্নীতি নিয়ে বিজেপির কাউকে রাজপথে দেখা যায়নি। গেরুয়া শিবিরের একাংশের যুক্তি, মুর্শিদাবাদ তাদের কোর ইস্যু। চাকরিহারাদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানানো ছাড়া এই মুহূর্তে বিশেষ কিছু করার নেই। যদিও বিজেপিরই একটি অংশের উপলব্ধি, নিয়োগ–দুর্নীতি ইস্যুতে আন্দোলন সংগঠিত করতে না পারলে সিপিএম সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে। বিধানসভা ভোটের মাত্র এক বছর আগে তা পদ্ম–শিবিরের জন্যে বড়সড় বিপদও ডেকে আনতে পারে।
বিজেপির অন্দরের এই টানাপড়েনে মুর্শিদাবাদের দিকেই যে আপাতত পাল্লা ভারী, তা মঙ্গলবার অবশ্য এক রকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী, দু’জনই এ দিন মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে তুলনামূলক বেশি সক্রিয় ছিলেন। মুর্শিদাবাদের আক্রান্ত হিন্দু পরিবারগুলির জন্যে অর্থ সংগ্রহ করতে সুকান্ত সদলবলে হাজির হন হাজরা মোড়ে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বচসাতেও জড়ান।
সুকান্তদের আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলে পুলিশ। বিজেপিরই একাংশের প্রশ্ন, চাকরিহারারা সোমবার রাত থেকে এসএসসি অফিসের বাইরে বসে আছেন। মুর্শিদাবাদের আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশাপাশি কলকাতায় শিক্ষকদের সমর্থনে কোনও কর্মসূচিতে কেন সামিল হলেন না সুকান্তরা!
বিজেপি নেতারা কেন দলবেঁধে সল্টলেকে যাচ্ছেন না, তার ব্যাখ্যায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য বক্তব্য, ‘এটা অরাজনৈতিক অন্দোলন। আন্দোলনকারীরা চান না আমরা কেউ সেখানে যাই। মানবিক দিক থেকে যেটুকু করার করছি। সজল ঘোষ, পীযূষ কানোডিয়ার মতো বিজেপি নেতারা ক্যামেরার সামনে না এসে যেটুকু পরিষেবা দেওয়ার দিচ্ছেন। ভবিষ্যতেও দেবেন। চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকারা আমাদের আহ্বান করেননি। ওঁরা চান না এই আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দল যুক্ত হোক।’
এর সঙ্গেই শুভেন্দু জানান, তিনি আপাতত মুর্শিদাবাদ যাওয়ার জন্যে মুখিয়ে আছেন। তাঁর কথায়, ‘আদালতের ছাড়পত্র পেলে আমি বৃহস্পতিবার থেকে মুর্শিদাবাদে ত্রাণ বিলির কাজে অংশ নেব। মুর্শিদাবাদের আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এখন আমার প্রায়োরিটি।’
বিজেপি যখন এই ডামাডোলে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তখন ঘোষণা করেছেন, সল্টলেকে ধর্নায় বসা চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকাদের পাশে দলের ছাত্র, যুব, শিক্ষক–সহ অন্য সংগঠনগুলি থাকবে। আন্দোলনকারীদের প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়া হবে। বস্তুত, সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ–র নেতৃত্ব এ দিনই শুকনো খাবার ও পানীয় জল নিয়ে এসএসসি অফিসের সামনে অবস্থানরত শিক্ষকদের কাছে গিয়েছিলেন।
বাম মনোভাবাপন্ন চিকিৎসকদের একাংশও সেখানে গিয়েছেন। এবিটিএ–র হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতার নেতৃত্ব দফায় দফায় যান সেখানে। ধাপে ধাপে সিপিএমের ছাত্র–যুব সংগঠনও অবস্থানকারীদের পাশে যাবে বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর। সেলিম বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের মধ্যে নানা ভাষার, নানা ধর্মের মানুষ আছেন। বিজেপি গত কয়েক দিন ধরে শুধু িহন্দু–মুসলিম করছে। আন্দোলনকারীরা বিজেপির কোনও ফাঁদে পা দেবেন না।’
চিকিৎসকদের আন্দোলনের মতো শিক্ষকদের আন্দোলনের রাশও কি তা হলে বামেদের হাতেই চলে যাবে? এই প্রশ্নটা কিন্তু ভাবাচ্ছে বিজেপির অনেককেই।