কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার সাক্ষী হুগলির পরিবার। বুধবার সকালে এই সময় অনলাইনের সঙ্গে যখন মঙ্গলবারের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন, তখনও পরিবারের কর্তা স্কুল শিক্ষক চঞ্চল দে-র গলা কাঁপছে। গাড়িতে পহেলগাম থেকে জম্মুর পথে ফিরছেন তাঁরা। হুগলির ব্যান্ডেল টায়ার বাগানের বাসিন্দা চঞ্চল দে, তাঁর স্ত্রী, ছেলে-সহ মোট ১১ জনের একটি টিম গত ১৬ তারিখ কাশ্মীরের পথে রওনা দেন। মঙ্গলবারই পহেলগামে পৌঁছন তাঁরা। দুপুর তখন প্রায় আড়াইটে-তিনটে। এর পর যা হয়েছে, হাড়হিম করা সেই অভিজ্ঞতা শোনালেন চঞ্চল দে—
পহেলগামে যেখানে পর্যটকদের ঘোরার জায়গা, তা থেকে আমাদের হোটেল ১৬ কিলোমিটার দূরে ছিল। হোটেলে লাগেজে রেখেই বেরিয়ে পড়ি। প্রায় ১০০-২০০ মিটার হেঁটে ফেলেছি। প্রচুর ঘোড়া। সহিসরা বলছিলেন, বৈসরন ভ্যালিতে যাওয়ার কথা। তবে আমরা ঘোড়া না নিয়ে আরও কিছুটা হাঁটতে থাকি। মোটামুটি ৬ কিলোমিটার দূরে বৈসরন । আমরা হাঁটছিলাম। কিছু লোক বলতে শুরু করল বৈসরন ভ্যালি মে ফায়ারিং হো রহা হ্যয়। দেখি চারদিকে, লোকজন ছুটছে। ফুটপাত থেকে দোকানপাট তুলে ফেলছে।
মিলিটারিরা ছোটাছুটি করছে, গাড়ি আসছে দ্রুত। আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই। সবাই দৌড়চ্ছে, আমরাও তাড়াতাড়ি গাড়ি ডেকে হোটেলে চলে যাই। হোটেলে যাব কী, ততক্ষণে রাস্তায় পুরো জ্যাম লেগে গিয়েছে। প্রায় ১০০টার উপরে গাড়ি দাঁড়িয়ে। আসলে সকলে চাইছে আগে বেরোতে। সকলে এলাকা ছাড়ার জন্য মরিয়া। শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে। উল্টো দিক থেকে সেনার গাড়ি আর অ্যাম্বুল্যান্স আসছে। আধ ঘণ্টায় কম করে ১০০টা অ্যাম্বুল্যান্স আর ৫০-৬০টা সেনার গাড়ি গেল।
যখন হোটেলে ঢুকলাম, মনে হলো মৃত্যুর অলিগলি পাশ কাটিয়ে ফিরলাম। এ সব দেখেশুনে আমার ৮ বছরের ছেলেটা এত ভয় পেয়ে গিয়েছিল, চোখ পুরো বড় বড় করে কেমন একটা যেন করছিল। মুখে কথা নেই, বমি পাচ্ছে বলছে। ওকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক করতে পেরেছি। তবে হোটেলে ফিরলেও আমরা সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি। কখন ভোর হবে, বেরিয়ে আসব। সারা রাত খালি মনে হয়েছে, এই বোধহয় হোটেলে জঙ্গি হামলা হলো, আমরা বোধহয় শেষ!
আজও গাড়িতে একটা ভয় কাজ করছে। আমাদের অমৃতসর থেকে ট্রেনে ২৬ তারিখ ফেরার টিকিট। আজ ভোরেই পহেলগাম থেকে বেরিয়ে পড়েছি। রামবানে আবার ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। চলাচল করা যাচ্ছে না। গাড়ি নিয়ে মোগল রোড ধরে জম্মুতে ফেরার চেষ্টা করছি। জানি না কখন কী ভাবে পৌঁছব। তবে ভয় আমাদের কাটছে না।