• ভূস্বর্গে বলি বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার, বৃহস্পতিবার শহরে ফেরার কথা ছিল বিতানের
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • শ্রীনগর: পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কর্মসূত্রে ফ্লরিডানিবাসী কলকাতার বিতান অধিকারী। কলকাতায় ফিরে স্ত্রী ও আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে কাশ্মীরের শোভা দেখতে গিয়েছিলেন। ফেরার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু আর ফেরা হলো না। কাশ্মীরেই স্ত্রী-পুত্রকে একা করে জঙ্গিহানার বলি হলেন বিতান। পাহাড়ে যাঁর গাড়িতে চড়ে চলছিল ট্যুর, হতভম্ব সেই চালক আকাব মালিকও। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত, কথা বলার অবস্থায় নেই। আমার উচিত, সর্বতো ভাবে এই পরিবারের পাশে থাকা। সেটাই রয়েছি। ওঁরা যাতে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন, সে দায়িত্ব আমার। ওঁদের দেখভাল করছি আমি।’

    বেহালার বৈশালী পার্কের বাসিন্দা বিতান অধিকারীর বয়স চল্লিশ। এক বেসরকারি তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। বছর আষ্টেক আগে বিয়ে হয়েছিল সোহিনীর সঙ্গে। সোহিনীও এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। বিয়ের পরে সংস্থার কাজের সূত্রে ফ্লরিডা চলে যান বিতান। চাকরি ছেড়ে তাঁর সঙ্গী হন সোহিনীও। সেখানেই জন্ম হয় তাঁদের ছেলে ঋদানের। বছর দুয়েক আগে ছেলেকে নিয়ে ভারতে ফেরেন তাঁরা। সেই থেকে সোহিনীর বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতেই থাকছিলেন সকলে। কিন্তু বিতানের প্রজেক্ট শেষ না-হওয়ায় আবারও ফ্লরিডায় ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই করেছিলেন ট্যুরের পরিকল্পনা। সব ব্যবস্থা করে কলকাতায় ফিরেছিলেন ৮ এপ্রিল। গত বুধবার, ১৬ এপ্রিল স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে রওনা দেন কাশ্মীরের উদ্দেশে।

    আপাতত বিতানের শোকে সন্তপ্ত তাঁর পরিবার। বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতেই থাকেন বিতানের মামাতো ভাই দীপক চক্রবর্তী। দুর্গাপুরে ছোটখাটো কাজ করলেও তাঁর প্রধান কাজ ছিল ঋদানের দেখাশোনা করা। জঙ্গিহানার খবর আসা ইস্তক কেঁদে আকুল দীপক। বার বার বলে চলেছেন, ‘আমার বাবাটা (ঋদান) না-খেয়ে আছে। আমি কিছু খাব না।’ বিতানের বেহালার বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। সম্প্রতি বিতানের অশীতিপর বাবা বীরেশ্বরের বুকে বসেছে পেসমেকার। আপাতত তাঁদের এই দুঃসংবাদ দেওয়া হয়নি। টিভিও দেখতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের।

    এই পরিস্থিতিতে বৈষ্ণবঘাটার বাড়িতে আসেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ফোনে খবর পেয়ে সেখানে এসেছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সোহিনীর সঙ্গে আমার দু’তিনবার কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও ওঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। রাজ্য সরকার ওঁদের পাশে আছে। এই হামলায় নিহতদের দেহ শ্রীনগর হাসপাতালে রাখা আছে। বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের পরে পরিবারের হাতে দেহগুলি তুলে দেওয়া হবে।’ পরিবারের যে কোনও প্রয়োজনে তিনি পাশে আছেন বলেও জানান। স্থানীয় সূত্রের খবর, আজ বুধ অথবা কাল বৃহস্পতিবার বিতানের দেহ কলকাতায় ফিরবে। হয়তো একই উড়ানে ছেলেকে নিয়ে ফিরবেন সোহিনী।

  • Link to this news (এই সময়)