কৌশিক দে, মালদা
৯০ দশকের সেই হাড়হিম করা ভূতের টিভি সিরিয়াল ‘কিলে কা রহস্য’–এর কথা মনে আছে? এক প্রাচীন দুর্গ ঘিরে তৈরি হওয়া সেই ধারাবাহিক থেকে আতঙ্ক জন্মেছিল সাধারণের মনে। তবে এ বার সিরিয়ালের প্লটে নয়, পুরাতন মালদার রাঙামাটিয়ার এক ‘ভূত–বাড়িকে ঘিরে ভয় রয়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে। রাত হলে ওই এলাকার ধারপাশ মাড়ান না স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই ভূতুড়ে বাড়িটি ‘সাহেব দালান’ নামে পরিচিত। এ দিকে আবার একাদল ছেলেমেয়ে দিনের বেলায় সাহেব দালানের সামনে রিলস বানিয়ে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবি, রাত নামলেই সেই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে নাকি তেনারা বেরিয়ে আসেন। নানা রকম শব্দও নাকি শোনা যায়।
জানা গিয়েছে, পুরাতন মালদা ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঙামাটিয়া গ্রামের এই বাড়িটি এক সময়ে নীলকর সাহেবরা তাঁদের রানিদের নিয়ে থাকতেন। সাহেবদের থাকার ত্রিবর্গাযুক্ত ভাঙাচোরা ওই দোতলা বাড়ির চতুর্দিক এখন জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা, এই পরিত্যক্ত বাড়িতে ব্রিটিশ সাহেবদের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। রাত হলে তারা সব অদ্ভূত শব্দ করতে থাকেন। যদিও গ্রামবাসীর এমন দাবিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভুনাথ দুবে। তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।’
পরিত্যক্ত বাড়িটির প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যই রয়েছে একটি চার্চ। রাঙামাটিয়া গ্রামে কয়েকশো পরিবারের বসবাস থাকলেও, সাহেবের দালানের আশপাশে কোনও জনবসতি নেই। গ্রামবাসীর বক্তব্য, ওই পরিত্যক্ত বাড়ির আশেপাশে অনেক কৃষিজমি রয়েছে। যাঁরা সেখানে কাজ করেন, তাঁরা সন্ধে নামার আগেই বাড়ি ফিরে আসেন। রাতে ওখানকার রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করেন না। তাঁরা বলেন, ‘ওখানে গেলেই কেমন যেন গা ছমছম করে।’ স্থানীয় দিলীপ সাহা, অমিত মণ্ডল, রাজু সাহাদের কথায়, ‘বাপ- ঠাকুরদাদের সময় থেকেই সাহেবদের এই বাড়ি নিয়ে নানান ভৌতিক কাহিনী শুনে এসেছি। রাতে আমরা কেউ সেখানে যাই না। যদিও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকায় ওই জায়গাটি বিষধর সাপ, শিয়ালের আখড়া হয়ে উঠেছে।’
স্থানীয়দের মধ্যে যাঁরা ভূতে বিশ্বাস করে না তাঁদের দাবি, ব্রিটিশ আমলের এই বাড়ি যদি সংস্কার করা সম্ভব হতো, তা হলে হয়তো সেখানে ঘোরার মতো একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি হতো। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা শাখা সংগঠনের সম্পাদক সুনীল দাসের কথায়, ‘ভূত বলে কিছু হয় না। এগুলো আসলে গুজব। বহুদিন আগে এমন এক ঘটনা শুনে ওখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হয়েছিল। কোনও কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাতে অনেক সময়ে শিয়ালরা শব্দ করে। ওতেই সম্ভবত গ্রামবাসীর মনে ভয় তৈরি হয়েছে। আমাদের তয়ফে এসব ভুল ধারণার বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই সচেতনতমূলক প্রচার চালানো হয়।’