• জেলা সভাপতিদের ভোটে লড়তে বারণ, অস্বস্তি বঙ্গ-বিজেপিতে
    এই সময় | ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন পর্বের শুরুতেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিধায়করা কেউ জেলা সভাপতি হতে পারবেন না। যে বিধায়করা জেলা সভাপতির চেয়ারে বসে আছেন, তাঁদের চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে। সাংগঠনিক নির্বাচন পর্ব শেষ হওয়ার মুখে দিল্লি থেকে নয়া বিজ্ঞপ্তি এল রাজ্য বিজেপি দপ্তরে। সেখানে জানানো হয়েছে, জেলা সভাপতিরা কেউ ’২৬–এর বিধানসভা ভোটে লড়তে পারবেন না।

    হাতে গোনা কয়েকটি জেলা ছাড়া রাজ্যের সব সাংগঠনিক জেলাতেই সভাপতির নাম ঘোষণা করে দিয়েছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর এই সিদ্ধান্তের কথা জানার পরে তাঁরা অনেকেই বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর। বিজেপির এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘এতে আমাদের সাংগঠ‍নিক দলের সঙ্গে পরিষদীয় দলের বিভেদ দূর হবে না। বরং আরও বাড়বে। বিধায়করা জেলা সভাপতি হতে পারবেন না, জেলা সভাপতিরা বিধায়ক হতে পারবেন না— এ সব ফতোয়া অর্থহীন। বিধায়ক অথবা জেলা সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য একটাই মাপকাঠি থাকা উচিত, সেটা হলো যোগ্যতা। অন্য কিছু নয়।’

    বিধায়করা জেলা সভাপতি হতে পারবেন না, এই নির্দেশিকা জারির পরে বিজেপির অন্দরে রীতিমতো চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছিল। হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতিও ছিলেন। তাঁর জেলায় নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা হওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি পদ্ম ছেড়ে জোড়াফুল তুলে নেন হাতে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, তাপসীর দলবদলের অনেকগুলি কারণের মধ্যে একটা হলো জেলা সভাপতির পদ হারানো। উত্তরবঙ্গের কুমারগ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজ কুমার ওঁরাও কিছু সপ্তাহ আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দলের যাবতীয় সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, তিনি আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধায়ক হওয়ার কারণে তাঁকে সেই চেয়ারে বসানো হয়নি। সে ক্ষোভই তিনি ঘুরিয়ে উগরে দেন ফেসবুকে।

    বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর এ বারের ফতোয়া— জেলা সভাপতিরা আগামী বিধানসভা ভোটে লড়তে পারবেন না। যার প্রেক্ষিতে এক প্রবীণ বিজেপি নেতার টিপ্পনি, ‘ভয় হচ্ছে, কোনও জেলা সভাপতি আবার তৃণমূলে না–চলে যান! কারণ, বিধায়কদের জেলা সভাপতি হওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির পরে আমাদের এক বিধায়ক দল ছেড়েছেন। অনেকে এখনও গোঁসা করে আছেন।’

    ২০২১–এ বিজেপির বেশ কয়েকজন জেলা সভাপতি বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন। সিংহভাগই হেরেছিলেন। পরবর্তীতে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নেন যে, জেলা সভাপতিদের টিকিট দেওয়া ভুল হয়েছে। কারণ, তাঁরা সংগঠনের কাজ ফেলে নির্বাচনী প্রচারেই মেতেছিলেন। ’২৬–এ আর সেই ‘ভুল’–এর পুনরাবৃত্তি চাইছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলও।

    কিছুদিন আগে বিজেপির জেলা সভাপতিদের কলকাতায় ডেকে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ভোটের আগে টিকিট চাইতে আসবেন না। দেওয়া হবে না। আপ‍নারা সংগঠন দেখবেন। নিজের এলাকার বিজেপি প্রার্থীদের জিতিয়ে আনাই আপনার লক্ষ্য হোক।’ এ প্রসঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের এক বিজেপি জেলা সভাপতির প্রশ্ন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, জেলা সভাপতিরা বিধানসভা ভোটে লড়তে পারবেন না। ভালো কথা। তা হলে ২০২১–এ কেন একজন সাংসদকে রাজ্য সভাপতির চেয়ারে বসানো হয়েছিল? ২০১৯–এ বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দি‍লীপ ঘোষকে কেন লোকসভা ভোটে লড়ানো হয়েছিল?’

  • Link to this news (এই সময়)